কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত | কক্সবাজার দর্শনীয় স্থান

আজকের আর্টিকেলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমণের উপযুক্ত সময়, কক্সবাজার ভ্রমনের কিছু সতর্কতা, কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থান সমূহ এবং কক্সবাজার যাওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন৷ বাংলাদেশের সবচাইতে বড় সমুদ্র সৈকত হচ্ছে কক্সবাজার। 

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
এটি বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গে অবস্থিত৷ পৃথিবীর দীর্ঘতম একটি প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত হচ্ছে বাংলাদেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৫ মাইল বা ১২০ কিলোমিটার। বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।

এখানে প্রতিদিন দেশি বিদেশি অসংখ্য পর্যটক এসে ভিড় জমায়। আমাদের মাঝে একটি প্রশ্ন বারবার  ঘুরপাকখায় যে কক্সবাজার এই নামটি কিভাবে আসলো এবং কত সালে এ নামকরণ করা হয়, তাই আমরা সবার আগে এসব প্রশ্নের উত্তর জানবো।  

১৬১৬ সালের ভূগোল সাম্রাজ্যের সময় কক্সবাজার এবং চট্রগ্রামসহ বিশাল বড় একটি অংশ আরাকান রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সে সময় এদেশে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক অফিসারের নাম ছিল ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স। আর এই নামটি থেকে কক্সবাজার নামকরণ করা হয়। এর আগে কক্সবাজারের নাম ছিল পালংকি৷ 

এখন আমরা জানতে চলেছি কক্সবাজারের বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য কক্সবাজারের এই বিশাল সৈকতটি পুরোটাই বালুকাময়। এখানে কাঁদার কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায় না, এখানে সারা বছর ঘুরতে আসা যায়। যদি কোন মানুষের মন ভীষণভাবে খারাপ থাকে আর সে যদি এই বালুকাময় সৈকতে পা রাখে তার মন উৎফুল্ল হয়ে উঠবে৷ 

কক্সবাজারে কোন সময় গেলে সবচাইতে বেশি সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়?

বাংলাদেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত হল এমন একটি সৈকত এখানে আপনি বছরের যেকোন সময় ঘুরতে আসতে পারবেন। এখানে সারা বছরই এর অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখা যায়। তবে  সাধারণত মানুষ শীতকালকেই কক্সবাজার ভ্রমনের জন্য বেশি আসে। তবে এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণও আছে। 

যেমনসারা বছরে ক্লান্তি দূর করতে বছরের শেষের দিকে শীতকালেই মানুষ নিজেদেরকে রিফ্রেশ করার জন্য এবং মস্তিষ্ক ফ্রেশ করতে কক্সবাজারে আসে। তবে প্রকৃতি যে আবার রূপ বদলায় সে কথা ভূলে গেলে চলবে না। এই রূপ বদলার কারণে কিছুটা প্রভাব কক্সবাজারের উপরেও পড়ে।

যেমনঃ গ্রীষ্মকালে গেলে আপনি কক্সবাজারে একরকমের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। আবার হেমন্তের এক পূর্ণিমার রাত আপনাকে মুগ্ধ করবে। আবার বর্ষাকালের ঝুম বৃষ্টিতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঘুরে আপনি অন্য রকম এক আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন।

কক্সবাজার যাওয়ার সহজ উপায়?

ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার অনেক উপায় রয়েছে। আপনি যদি একজন ভ্রমণ প্রিয় মানুষ হন। লং জার্নি করতে পছন্দ করেন, তাহলে আপনি বাসে অথবা ট্রেনে করে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে যেতে পারেন। আর আপনি যদি বেশি জার্নি করতে পছন্দ না করেন, বিরক্ত মনে করেন কিন্তু আপনি ভ্রমণ করতে চান, তাহলে আপনি প্লেনে করে যেতে পারেন। 

যদিও ঢাকা থেকে ট্রেনে করে সরাসরি আপনি কক্সবাজার যেতে পারবেন না। এর জন্য আপনাকে প্রথমে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে হবে। এরপর চট্টগ্রাম থেকে বাস করে আপনাকে আবার কক্সবাজার যেতে হবে। আপনি যদি আকাশপথে যান, তাহলে আপনি সরাসরি ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কক্সবাজার যেতে পারবেন। 

এখন সময় ও বাজেটের ওপর নির্ভর করে কোনটি আপনার জন্য সুন্দর হবে তা আপনাকে বাছাই করতে হবে। ট্রেন, বাস কিংবা প্লেন সব জায়গাতেই শ্রেণীভেদে সিটের ভাড়া নির্ধারণ করা থাকে। বাসে করে গেলে প্রতি সিটের ভাড়া সর্বনিম্ন ৯০০ টাকা থেকে ২০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে৷ আবার প্লেনে করে গেলে সর্বনিম্ন ভাড়া ৪৫৯৯ থেকে ১২০০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে৷ 

এখন আমরা জানব কম খরচে কক্সবাজারে ভাল মানের হোটেল?

কক্সবাজার ভ্রমণের সময় অবশ্যই আপনার মূল্যবান জিনিস সমূহ নিজ দায়িত্বে এমন ভাবে রাখার চেষ্টা করুন। যাতে চুরি ছিনতাই এরকম ঘটনা আপনার সাথে না ঘটে। বিভিন্ন দালালচক্র কক্সবাজারের আনাচেকানাচে রয়েছে। যারা প্রতারণার মাধ্যমে আপনার কাছ থেকে বেশি টাকা হাতিয়ে নিতে পারে। 

এমন কি তারা খাবার কিংবা অন্য কোন জিনিস প্রত্রের দাম বেশি নিতে পারে। কোন কিছু কিনার আগে দাম সম্পর্কে ভালভাবে জেনে নিন। অপরিচিত কোন লোকের সাথে তর্কে জড়াবেন না। সেখানে কিছু চক্র রয়েছে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে আপনার সাথে তর্কে জড়াবে এবং আপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করবে। 

কোন রেস্টুরেন্টে খাওয়ার আগে সেখানে দাম জিজ্ঞেস করে তারপর খাবেন। তা নাহলে খাওয়ার পর দেখবেন এমন সব দাম দিয়ে দিবে যা আপনি কখনও ভাবেননি যে এত দাম হতে পাড়ে। এভাবেও আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন৷ আর একটা কাজ করতে হবে কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের নাম্বার সাথে রাখতে হবে৷ 

কোন বিপদে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে ফোন করে বললে তারা আপনাকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে৷ আর অবশ্যই সাগরে নামার আগে জোয়ার ভাটা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে সময় মেনে সাগরে নামবেন৷ ভুলেও একা একা সাগরে নামার চেষ্টা করবেন না। আর আপনি যদি সাঁতার না জেনে থাকেন তাহলে আমি আপনাকে পরামর্শ দিব বেশি দূরে না যাওয়ার জন্য। 

যতটা সম্ভব কাছ থেকেই সাগরের পানি উপভোগ করে উঠে আসুন। সর্বশেষ আমি আপনাকে যে প্রয়োজনীয় টিপসটি দিব সেটি হল সব টাকা ক্যাসে না নিয়ে বিকাশ অথবা ব্যাংক লেনদেনের ব্যবস্থা রাখুন। যাতে কোন সমস্যা হলে আপনি সাথে সাথে টাকাটা উঠিয়ে নিতে পারেন। 

কক্সবাজারের কিছু দর্শনীয় স্থান?

কক্সবাজারের কিছু দর্শনীয় স্থানসমূহ যেমন বাংলাদেশের ভ্রমণকারীদের জন্য সবচেয়ে পছন্দের স্থান হচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। আর এই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য মানুষকে মুগ্ধ করে তুলে। তাই ভ্রমণকারীরা সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ছুটে আসে কক্সবাজার৷ 

আর এই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশকে বিশ্বের পরিচিত হতে অনেকাংশে ভূমিকা রেখেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের পর্যটকরা কক্সবাজারে ভিড় জমাচ্ছে। কক্সবাজারের বহু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। সকল দর্শনীয় স্থানসমূহ বিখ্যাত। 

কারণ এসকল স্থানগুলো প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা। বাংলাদেশের নাগরিকরা যখন ঘুড়ার কথা চিন্তা করে তখন সবার আগে কক্সবাজারের কথা মনে আসে৷ কারণ কম খরচে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থানগুলো উপভোগ করার সুবর্ণ সুযোগ সুবিধা শুধুমাত্র বাংলাদেশেই রয়েছে৷ 

কক্সবাজারে রয়েছে পাহাড়, সমুদ্র, ঐতিহ্য স্থাপনা, নদী, দ্বীপ, উপকূলীয় প্রকৃতি এবং অসাধারণ দর্শনীয় স্থান৷ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বেশ কয়েকটি বিচও রয়েছে। আর এই বীচ গুলো সকল পর্যটকদের কাছে অনেক প্রিয়।

লাবনী বিচ

লাবনী বিচ লাবনী পয়েন্টে অবস্থিত। এই বিচটি পুরাতন বিচ হিসেবে পরিচিত। কক্সবাজারে শুরুতেই লাবনী বিচ রয়েছে এই বিচটি এতটাই কাছে যে লাবনী বিচটিকে সমুদ্র সৈকত এর প্রধান সমুদ্র সৈকত বলা হয়ে থাকে।

সুগন্ধা বিচ

সুগন্ধা পয়েন্টে সুগন্ধা বিচ অবস্থিত। এ বিচে পায়ে হেঁটে যাওয়া যায়। তাছাড়া এই বিচের সার্ফিং উপভোগ করতে পারবেন। শুধুমাত্র যে কক্সবাজারের বিভিন্ন বিচের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে তা কিন্তু নয়। এখানে আপনারা ঘোড়ার পিঠে উঠে বিচের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন ও প্যারাসাইলিং করতে পারবেন৷ 

ঘুড়ি উড়াতে পারবেন, এছাড়াও শপিং করতে পারবেন, সাথে বোট চালাতে পারবেন। একসাথে আপনি অনেকগুলো বিনোদন উপভোগ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। 

কলাতলী বিচ

ভাস্কর ডলফিন মোড় অথবা সুগন্ধ সৈকত হতে এই বিচে হেঁটে হেঁটে আসা যায় এবং এই বিচের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তবে লাবনী এবং সুগন্ধা বিচ এর চেয়ে পর্যটকদের কাছে কলাতলী বিচ এর খরচ তুলনামূলক কম মনে হয়। তাছাড়া আপনারা সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন বিচের চেয়ারে বসিয়ে সমুদ্রের সৌন্দর্য এবং পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। 

এখানে বিভিন্ন ধরনের হোটেল পাবেন। আপনারা নিজেদের সামর্থ্য এবং সুবিধা অনুযায়ী এই হোটেলগুলোতে থাকতে পারবেন এবং দেশি বিদেশি নানান ধরনের সুস্বাদু খাবার খেতে পারবেন। সমুদ্র সৈকতের আশেপাশে ছোট ছোট অনেক মার্কেট রয়েছে। 

যেখানে সামুদ্রিক কিছু উপাদানকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের জুয়েলারি এবং জিনিসপত্র তৈরি করে বিক্রি করা হয়। তাছাড়া সমুদ্র সৈকতের শুটকি মাছ, সাথে বিভিন্ন ধরনের আচার এর স্বাদ নিতে পারেন৷ 

কক্সবাজার ভ্রমনের কিছু সতর্কতা ও টিপস?

কক্সবাজার অবশ্যই একটি অপরূপ সৌন্দর্যের পর্যটনকেন্দ্র। তবে আপনাকে কক্সবাজার ভ্রমণের সময় অবশ্যই কিছু সতর্কতা ও নিয়ম অবলম্বন করে চলতে হবে। তা নাহলে আপনি বিপদে পড়তে পারেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। 

যেহেতু এটি একটি বিশাল বড় পর্যটনকেন্দ্র। তাই এখানে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ঘটতে পারে। এজন্য আপনাকে বুদ্ধিমান ও চালাকচতুর হতে হবে৷ যেন আপনার ক্ষতি হওয়া আগে আপনি বুঝতে পারেন৷ 

আপনি যে হোটেলে উঠবেন তার আগে অবশ্যই সেই হোটেল সম্পর্কে ভাল করে খোঁজ খবর নিতে হবে। তা নাহলে সেখানকার দালালের চক্রে পড়ে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। 

ঢাকা থেকে কক্সবাজার কত কিলোমিটার?

ঢাকা থেকে কক্সবাজার ৩৯৮.১ কিলোমিটার।

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার কত কিলোমিটার?

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ১৪৮.১ কিলোমিটার।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য কত?

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার বা ৭৫ মাইল। যা পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url