টাকা পে কার্ড কিভাবে পাবো - টাকা পে কার্ড চার্জ

টাকা-পে এক ধরণের ডেবিট কার্ড। গ্রাহকরা প্রচলিত ভিসা কিংবা মাস্টার কার্ডের মতো এই কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারেন। আন্তর্জাতিক কার্ডের ওপর নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচাতে বাংলাদেশের নিজস্ব টাকা-পে কার্ড চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশের ভিতরে বিভিন্ন ব্যাংক এই কার্ড ইস্যু করতে পারবে এবং নিয়ন্ত্রণ থাকবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে।

টাকা পে কার্ড
টাকা পে কার্ড
ভারতে আমাদের টাকা-পে কার্ডের মতো  তাদেরও রুপি কার্ড রয়েছে। একইভাবে শ্রীলঙ্কার নিজস্ব কার্ড রয়েছে যার নাম লঙ্কা-পে কার্ড পাকিস্তানের পাক-পে এবং মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবের মাদা-কার্ড নামে নিজস্ব কার্ড রয়েছে। এবার টাকা-পে চালুর মধ্য দিয়ে এই তালিকায় যোগ হল বাংলাদেশও।

এখন ডেবিট কার্ড এবং পরবর্তীতে ক্রেডিট ও আন্তর্জাতিক কার্ড তৈরির লক্ষ্য হাতে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ২০২৩ এর ডিসেম্বরে টাকা-পে কার্ডের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে দ্বৈত মুদ্রা বা ডুয়ল কারেন্সি ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হতে চলেছে।

বাংলাদেশিরাও তখন ভারতে গেলে টাকা-পে কার্ডের মাধ্যমে ভারতীয় মুদ্রা রুপি সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন। বৈদেশিক মুদ্রা অর্থাৎ ডলার বা রুপি আলাদাভাবে বহন করার প্রয়োজন হবে না। বর্তমানে বাংলাদেশের নাগরিকরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশ ভারতে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় অর্থাৎ খরচ করছেন।

টাকা-পে কার্ডের লেনদেন কিভাবে করতে হবে?

বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ক্রমাগত সব ধরণের কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে। গত ২০২৩ এর আগস্ট মাসে কার্ডের মাধ্যমে মোট লেনদেন হয়েছে ৪১ হাজার কোটি টাকার বেশি। এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২২ এ ছিল মাত্র ৩৬ হাজার ৭৮৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ২০২৩ এর আগস্টে কার্ডে স্থানীয় মুদ্রায় ৪০ হাজার ৩২৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। 

এবং বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন হয়েছে ৬৫৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট কার্ড লেনদেনের ৯৮.৩৯ শতাংশ হয়েছে দেশের মধ্যে। বর্তমান সময়ে ভিসা, মাস্টারকার্ড, অ্যামেক্স, ডিনারস, কিউক্যাশ, জেসিবি ইউনিয়ন পে-এর মতো ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ড পরিষেবা রয়েছে। স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনের সুবিধা সম্পন্ন হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারকারী গ্রাহকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

নিজস্ব কার্ডের ব্যবহার বাড়লে কার্ডভিত্তিক লেনদেনের জন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর আমাদের দেশের নির্ভরতা কমবে। এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ এর আগস্টে ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে ৩৮ হাজার ১৬৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। এবং দেশে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৪৩৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। 

বেশির ভাগ লেনদেন হয়েছে ভিসা কার্ডের মাধ্যমে। আগস্টে এই কার্ডের মাধ্যমে মোট লেনদেনের পরিমান বাহাত্তর দশমিক ছেষট্টি শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও মাস্টার কার্ড সতেরো শতাংশ, এমেক্স দশ শতাংশ, ডিনার ০.১৩ শতাংশ, কিউ ক্যাশ মালিকানা ০.০৪ শতাংশ, JCB ০.০৪ শতাংশ এবং ইউনিয়ন পে ০.০৪ শতাংশ।

অন্যদিকে গত ২০২৩ এর আগস্টে বাংলাদেশের নাগরিকরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ৪১৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা বিদেশে লেনদেন করেছেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিদেশে খরচের পরিমান ভারতে বৃদ্ধি পেয়েছে। সে সময় ভারতে ১৭.৬২ শতাংশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৬.৩২ শতাংশ এবং থাইল্যান্ডে ৯ শতাংশ ব্যয় হয়েছিল।

টাকা-পে কার্ডের কি কি সুবিধা?

ডেবিট কার্ড হচ্ছে ব্যাংকে আমানতের বিপরীতে ব্যবহৃত কার্ড। আর ক্রেডিট কার্ড হচ্ছে সীমিত পরিমাণ ধার নেওয়ার সুযোগ দিয়ে কার্ড ইস্যু করে একটি সীমা বেঁধে দিয়ে, সেটি হল ক্রেডিট কার্ড। গ্রাহকের ব্যাংকে টাকা না থাকলেও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে গ্রাহকরা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে পারেন।

ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ব্যয় করা অর্থ ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে সুদ ছাড়াই ব্যাংকে পরিশোধ করতে হয়। এরপর ব্যাংক বকেয়া অর্থের ওপর সুদ যোগ করে থাকে। নগদ বহন করার চেয়ে তারা নিরাপদ ও সহজে লেনদেন করার জন্য কার্ড ব্যবহার করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান দেশে ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড ইস্যু করছে ৪৩টি ব্যাংক। 

এছাড়াও একটি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ক্রেডিট কার্ড সেবা দিচ্ছে। সব মিলিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের ইস্যুকৃত কার্ডের সংখ্যা তিন কোটি সাতাশ লাখের বেশি। এখন অবধি দেশে ব্যবহৃত সব কার্ডই বিদেশি কোম্পানির তৈরি। ব্যাংকগুলো একটি নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে এই কার্ড পরিষেবা প্রদান করছে। 

এতে এক ব্যাংকের দেওয়া কার্ড অন্য ব্যাংকের এটিএম (ATM) বুথে লেনদেনের জন্য অতিরিক্ত খরচ দিতে হয়। এছাড়াও বছর শেষে ব্যাংকগুলোকে গ্রাহকে ১৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত কার্ড ব্যবহার ফি দিতে হয়। এতে পনেরো শতাংশ ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া প্রি-পেইড কার্ড রয়েছে যেগুলো খুব কমই ব্যবহার করা হয়। 

কার্ডধারী বিদেশী মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া ব্যাংকের ফিগুলোর একটি বড় অংশ পায়৷ এতে করে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা চলে যায়। কিন্তু টাকা-পে কার্ডটি এনপিএসবি বা বাংলাদেশ ব্যাংকের ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। 

ফলে এই কার্ডের মাধ্যমে যেকোন এটিএম (ATM) বুথে সহজেই লেনদেন করা যাবে। সেক্ষেত্রে দ্রুত এবং নির্বিঘ্নে লেনদেন করাও যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছেন এ কার্ডের মাধ্যমে প্রচলিত কার্ডের তুলনায় খরচ কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ শতাংশ কম হবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মাজবাউল হক বলতেছেন, টাকা-পে কার্ড চালু হলেই প্রকৃত প্রভাব বোঝা যাবে।

টাকা-পে এর সাথে এখন যেসব ব্যাংকে যুক্ত রয়েছে প্রাথমিকভাবে ৮টি রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে টাকা-পে কার্ড চালু করতে যোগ দিচ্ছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক কার্ড ব্যবহারকারী গ্রাহকদের সংখ্যায় এগিয়ে। 

বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক (ইবিএল), ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), ডাচ-বাংলা ব্যাংকসহ মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক প্রাথমিকভাবে টাকা-পে কার্ড ইস্যু করার সুযোগ পাচ্ছেন। 

পরবর্তীতে অন্য ব্যাংকগুলোও চাইলে এই কার্ড ইস্যু করতে পারবে। আর বাংলাদেশের জাতীয় ডেবিট কার্ড তৈরির কারিগরি বিষয়গুলো দেখভালের জন্য প্যারিসভিত্তিক পরামর্শক ফিম কে নিয়োগ করা হয়েছে।

টাকা-পে কার্ড নিতে যে সকল ডকুমেন্ট লাগবে?

টাকা-পে ডেবিট কার্ডের করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজনীয় যেসব ডকুমেন্ট লাগবে, টাকা পে ডেবিট কার্ড পেতেও একই প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস লাগবে। কোন অতিরিক্ত ডকুমেন্ট কিংবা কাগজ পত্র প্রয়োজন নেই। যেমনঃ

পরিচয় প্রমাণের জন্য

  • ভোটার আইডি কার্ড, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স
  • পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স কিংবা ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী আপনার ঠিকানার প্রমাণ।
  • দুটি পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি
  • নমিনি ব্যাক্তির ছবি এবং ভোটার আইডি কার্ড।
  • টাকা-পে ডেবিট কার্ডের বার্ষিক চার্জ

কার্ডের নাম

  • টাকা পে ডেবিট কার্ড
  • বীমা ফি (১ম বছর): সম্পূর্ণ বিনামূল্যে
  • বার্ষিক ফি (২য় বর্ষ থেকে): ৪৬০ টাকা (ভ্যাট সহ)
  • ভ্যাট সহ অন্যান্য ব্যাংক লেনদেনের প্রতি লেনদেনের চার্জ:
  • আট টি কিউ ক্যাশ সদস্য ব্যাংক = ১১.৫০ টাকা
  • অন্যান্য ব্যাংক = ১৭.২৫ টাকা।
বিঃ দ্রষ্টব্যঃ চার্জ এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। চুড়ান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপডেট করা হবে।

বাংলাদেশ ভারত ভ্রমনে টাকা-পে?

প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ চিকিৎসা ও ভ্রমণসহ নানান কাজে ভারতে যায়। এর জন্য আবার ইউএস ডলার কিনতে হয় এবং সেগুলোকে ভারতের রুপি তে রূপান্তর করতে হয়, এর ফলে প্রায়ই যাত্রীরা বিনিময় হার হারায়। এ সমস্যা সমধানের জন্য টাকা-পে নামে ডেবিট কার্ড আনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এই ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে আপনারা ভারতে যেতে এবং এটিএম থেকে টাকা তুলতে এমনকি অনলাইনে কেনাকাটা করতে পারবেন। তবে ভ্রমণকারীরদের জন্য সর্বোচ্চ যে পরিমাণ ভ্রমণ কোটায় ১২ হাজার ডলার পর্যন্ত রয়েছে, তিনি এই পরিমাণ টাকা খরচও করতে পারবেন।

তবে আপাতত দেশেই এই সেবা চালু হবে। ভবিষ্যতে টাকা পে কার্ড ভারতেও ব্যবহার করা যাবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url