পড়া মনে রাখার উপায় - পড়া মনে রাখার গোপন রহস্য

আমি অনেক পড়ি কিন্তু কিছুতেই আমার পড়া মনে থাকে না। এই কথা শিক্ষার্থীদের মুখে আমরা প্রায়শই শুনে থাকি। পড়া মনে থাকে না অথবা ভুলে যাওয়ার মতো সমস্যা প্রায় সব শিক্ষার্থীর রয়েছে। তবে কারও কম আবার কারও কারও একটু বেশি হয়।
পড়াশোনা
পড়াশোনা
কিন্তু আমরা যদি পড়া মনে রাখার বৈজ্ঞানিক উপায় গুলো অবলম্বন করি, তাহলেই আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি। আজকে আর্টিকেলে পড়া মনে রাখার  উপায়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।

পড়া মনে রাখার উপায়?

নিচে উল্লেখিত প্রতিটি পরামর্শ আপনি যদি মেনে চলতে পারেন, তাহলে খুব সহজেই পড়া মনে রাখতে পারবেন।

পর্যাপ্ত ঘুমানো

আমাদের ব্রেইনকে রিলাক্স রাখতে পারলেই আপনি সহজেই পড়া মনে রাখতে পারবেন। এজন্য পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য। একজন সুস্থ ব্যক্তির সাধারণত ৭ থেকে ৯ ঘন্টার মতো ঘুমানো উচিত। এর থেকে কম ঘুমালে আপনার পড়া মনে রাখার সক্ষমতা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
 
ঘুমের অভাব সহজেই আপনার একাগ্রতা ব্যাহত করতে পারে। আপনার যদি নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম না হয়, তাহলে এর প্রভাব আপনার মেজাজ এবং কাজের ওপর দেখা যায়। অনেক সময় ঘুম কম হওয়ার কারণে আমাদের সারাদিন খারাপ যায়। 

আমাদের মন ভারাক্রান্ত হয় ও কোন কাজে মনোনিবেশ করতে পারি না। তাই ঘুমানোর সঠিক সময় ঠিক করে নিন, যার ফলে অলসতা এবং ক্লান্তির মতো সমস্যা আপনার আর হবে না। 

আপনি মনকে একাগ্র করতে পারবেন ও পড়া ভাল মনে থাকবে। ঘুম হল পড়া মনে রাখার উপায়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

পড়ার জন্য সঠিক সময় নির্বাচন করুন

সঠিক সময় নির্বাচন করা পড়া মনে রাখার উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম। পড়া মনে রাখতে হলে অবশ্যই আপনাকে পড়ার জন্য সঠিক সময় নির্বাচন করতে হবে। তবেই পড়া আপনার ভাল মনে থাকবে। 

যে সময়ের কাজ সেই সময়ে করতে হবে নতুবা কোন কাজেই আপনার মন বসবে না। অনেকেই বলে থাকেন রাত নিরিবিলি থাকে তখন পড়লে পড়া তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়। সত্যি বলতে এ দাবিটি সত্য নয়। 

দিনে, সন্ধ্যায় ও সন্ধ্যার পর পড়লে এবং সকালে ফজরের নামাজ পড়ে পড়তে বসলে তাতেই অনেক পড়া যায়। এ সময় আমাদের মন মস্তিষ্ক খুবই সতেজ থাকে।

আপনি যদি রাত জেগে পড়াশোনা করেন। তাহলে আপনার পুরো দিনটাই আলসেমিতে ও দিনটাই ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে যাবে। এজন্য অবশ্যই রাত জেগে পড়াশোনা করার বদ অভ্যাসটি থাকলে এখনে বদলে ফেলুন।

উচ্চস্বরে পড়ুন

উচ্চস্বরে পড়া, পড়া মনে রাখার সহজ উপায়ের মধ্যে অন্যতম। আর তাই উচ্চস্বরে পড়ার চেষ্টা করুন। উচ্চস্বরে পড়লে কথাগুলো কানে পুনশ্চ সহজে শোনা যায়। যার ফলে সহজে পড়া আয়ত্ত করা যায়। শব্দহীনভাবে পড়লে এক সময় আপনার পড়ার গতি কমে যায়।

সেই সঙ্গে শেখার আগ্রহও হারিয়ে যায়। আর আগ্রহ না থাকলে পড়াটা মস্তিষ্ক থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। শেখা শেষ হলে বারবার সেটার পুনরাবৃত্তি করুন। পড়া মনে রাখার ক্ষেত্রে ইহা আপনাকেও অনেক সাহায্য করে। পড়া মুখস্থ করার জন্য এই পদ্ধতি অনেকে পালন করে থাকে।

হাইলাইটার পেন ব্যবহার করুন

আমাদের মধ্যে অনেকেই মার্ক করে অথবা দাগিয়ে পড়তে ভালোবাসেন। এটাও পড়া মনে রাখতে বেশ কার্যকর হয়। গুরুত্বপূর্ণ অংশটুকু চিহ্নিত করার ফলে কোন শব্দ অথবা বাক্যের প্রতি আকর্ষণ এবং আগ্রহ বেড়ে যায়। 

সেই সাথে ওই অংশটুকুর উপর ব্রেইনের ভিজ্যুয়ালিটি ইফেক্টও অনেকটা বেড়ে যায়। যা পড়াকে মনে রাখতে অনেক সাহায্য করে থাকে।

পড়া অন্যকে শেখানো

পড়া মনে রাখার এই কৌশলটি অত্যন্ত কার্যকরী। অন্যকে শেখানোর মাধ্যমে নিজে যা পড়েছেন অথবা জেনেছেন তা মানুষের মস্তিষ্কে আরও ভালভাবে গেঁথে যায়। পাশাপাশি অন্যকে শেখানোর ফলে নিজের দক্ষতা প্রকাশ পায় ও পড়াটি আরও ভালভাবে আয়ত্ত হয়েছে কিনা সেটাও সহজে বুঝা যায়।

কনসেপ্ট ট্রি তৈরি করুন

পড়া মনে রাখার অন্যতম একটি কৌশল হচ্ছে কনসেপ্ট ট্রি। এ পদ্ধতিতে কোন একটি বিষয় শেখার পূর্বে পুরো অধ্যায়টিকে কয়েকটি অংশে ভাগ করে প্রতিটি অংশের জন্য একটি লাইন করে সারমর্ম লিখতে হবে।

এরপর খাতায় একটি গাছ এঁকে প্রতিটি সারমর্মকে গাছের এক একটি পাতায় লিখে রাখতে হবে। এরপর পাতাগুলোতে প্রতিদিন চোখ বুলালেই অধ্যায়টি সম্পর্কে আপনি একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাবেন। পড়া সহজে মনের রাখার জন্য ইহা অত্যন্ত কার্যকরী উপায়।

লিখে পড়ার অভ্যাস করুন

লিখে পড়ার অভ্যাস পড়া মনে রাখার একটি কৌশল। লিখে পড়লে আমাদের ব্রেনের এলাকা অনেক বেশি উদ্দীপ্ত হয়। লেখার সাথে ব্রেনের যে অংশগুলো জড়িত তা তথ্যকে স্থায়ী মেমোরিতে রূপান্তর করতে সহায়তা করে থাকে। 

এছাড়াও মানুষ কোন কিছু লিখতে চাইলে উক্ত বিষয়ের প্রতি মনোযোগ বেড়ে যায়। যা স্থায়ী মেমোরি তৈরিতে সাহায্য করে থাকে। এতে করে আপনার পড়া ভাল মনে থাকে। আমরা যে মস্তিস্কের দ্বারা পড়া মুখস্থ করি তার স্বাভাবিক প্রবণতা হচ্ছে চিন্তা করা। 

মুখস্থ করার মানে হচ্ছে এই স্বাভাবিক প্রবণতার বিরুদ্ধে যাওয়া। মুখস্থ বিদ্যার ক্ষতির দিক হচ্ছে ইহা আমাদের চিন্তাশক্তিকে ভোঁতা করে দেয়। মুখস্থ বিদ্যার মাধ্যমে ভাল ফল করলেও ইহা ক্ষতিকরই বটে। 

কারণ হচ্ছে এটা চিন্তাশক্তিকে অকেজো করে দিয়ে উচ্চতর পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাকে কঠিনতর করে দেয়। এসব শিক্ষার্থী যত ওপরের ক্লাসে উঠবে, তার কাছে পাঠ তত বেশি জটিল আর কঠিন মনে হবে।

রিভাইজ করুন

এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, আমরা আজকে সারাদিন যত কিছু পড়ি, শুনি, জানি অথবা দেখি তা পাঁচ দিন পর ৪ ভাগের ৩ ভাগই ভুলে যাই। এ ভুলে যাওয়া ঠেকানোর জন্য কিছু টিপস রয়েছে, যেমনঃ ৪৫ মিনিট পর ১৫ মিনিট ব্রেক ও সেই ব্রেকে মনে মনে সেই পড়াটা রিভাইজ দেওয়া এবং কোথাও আটকে গেলে তা আবার দেখে নেওয়া।

আজকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু টপিক পড়ে আগামীকাল ঘুমানোর আগে উক্ত পড়াসমূহ রিভাইজ দেওয়া। এরপর এক সপ্তাহ পর পুনরায় রিভাইজ দিলে দীর্ঘদিন আপনার পড়া মনে থাকবে। পড়া সহজে মনে রাখার এ উপায়টি বেশ কার্যকর।

ভিজুয়ালাইজেশন

পড়া মনে রাখার উপায়গুলোর মধ্যে আরও একটি উপায় হচ্ছে ভিজুয়ালাইজেশন। আমরা যখন কোন নাটক অথবা সিনেমা দেখি তখন সেই নাটক বা সিনেমাটা সহজেই মনে রাখতে পারি। তার কারণ হচ্ছে ভিজুয়ালাইজেশন।

আপনি যে টপিকটি পড়ছেন তা যদি ভিজুয়ালাইজড করা যায় অর্থাৎ, ভিডিও, ছবি, গ্রাফ অবা চার্ট আকারে উপস্থাপন করা যায়। তাহলে পড়া মনে রাখাটা আরও বেশি সহজ হয়। কারণ হচ্ছে ভিজুয়ালাইজেশনে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো খুব বেশি সজাগ রাখে।

উদাহরণ তৈরি করে নিন

আপনি যে টপিকটি নিয়ে পড়বেন তার সঙ্গে মিল রেখে বাস্তব কিছু ঘটনা অথবা উদাহরণ যদি খুঁজে বের করতে পারেন তাহলে পড়া অথবা তথ্য মনে রাখাটা আরও বেশি সহজ হবে।

বিরতি নিয়ে পড়ুন

পড়ার সময় ছোটো ছোটো প্রতিবার ২০ থেকে ৩০ মিনিট পড়ার পর পাঁচ থেকে সাত মিনিট বিরতি দিয়ে পড়লে বেশিক্ষণ পড়া যায়। এত করে পড়ার প্রতি একঘেয়েমি ভাব দূর হয় ও মস্তিষ্কে চাপ কম পড়ে। কারণ একটানা পড়লে মস্তিষ্ক অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

কিছুক্ষণ পড়ার পর মস্তিষ্ক আর তেমন চাপ নিতে পারে না। যার ফলে পড়ার প্রতি আর তেমন আগ্রহ থাকে না। এতে আপনার মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়।

কিওয়ার্ড তৈরি করে নিন

আপনি কঠিন কোন বিষয়কে কিওয়ার্ডে রুপান্তরিত করে সহজেই সেটা মনে রাখতে পারবেন। যেকোন বিষয়ের কঠিন অংশগুলো ছন্দের আকারে খুব সহজে মনে রাখতে পারবেন। যেমনঃ রংধনুর সাত রং মনে রাখার সহজ কৌশল হচ্ছে ‘বেনীআসহকলা’ শব্দটি মনে রাখা। 

সাতটি রংয়ের প্রথম আদ্যাক্ষর এই শব্দটিতে রয়েছে। ইংরেজি Lieutenant শব্দটির বানান মনে রাখা খুবই কঠিন। এমন অবস্থায় পড়া মনে রাখার এই উপায়টি খুবই কার্যকর। সেক্ষেত্রে মিথ্যা তুমি দশটি পিঁপড়া মনে রাখলেই বানানটি মনে হয়ে যাবে। 

কোন কিছু মনে রাখতে হলে তা বিভিন্ন অংশ অথবা সেগমেন্টে ভাগ করে পড়া বেশ উপকারী হয়। যেমনঃ ১২৮১৪০১৯ এ সংখ্যাটি মনে রাখা যতটা সহজ তার চাইতে ১২৮১ ও ৪০১৯ মনে রাখা আরও বেশি সহজ হয়। আমাদের ব্রেন অনেক বড় বিষয়ের চেয়ে ছোট বিষয়গুলো বেশি মনে রাখতে পারে।

মুখস্থ করবেন না

মুখস্থবিদ্যা সৃজনশীলতার বিকাশের অন্তরায় হিসাবে কাজ করে। মুখস্থবিদ্যা আপনার চিন্তাশক্তিকে অকেজো করে দেয়। পড়াশোনার আনন্দকে মাটি করে দেয়। কোন কিছু না বুঝে মুখস্থ করলে সেটা আপনি বেশিদিন স্মৃতিতে ধরে রাখতে পারবেন না। 

কিন্তু তার মানে এই নয় সচেতনভাবে কোন কিছু মুখস্থ করা যাবে না। বিভিন্ন ধরনের টুকরো তথ্য যেমনঃ সাল, তারিখ, বইয়ের নাম, ব্যক্তির নাম এবং বিজ্ঞানের কোন সূত্র ইত্যাদি বুঝে মুখস্থ করতে হবে। 

মুখস্ত করা শব্দটি ইংরেজি প্রতিশব্দ হল (Memorize)।  মুখস্থ বলতে আমরা বুঝি কোন কিছুকে না বুঝেই বার বার পড়ার মাধ্যমে স্মৃতিতে ধরে রাখা অথবা স্মৃতিতে ধারণ করার চেষ্টা করা।

শেষকথা, উপরে অনেকগুলো পড়া মনে রাখার সহজ উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আলোচ্য উপায়গুলো অনুসরণ করে আপনি পড়া মনে রাখতে পারবেন। পড়া মনে রাখার উপায়গুলোর মধ্যে আপনার কোনটি ভাল লেগেছে তা কমেন্টেস করে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url