আজানের জবাব দেওয়ার সঠিক নিয়ম

বন্ধুরা কেমন আছেন? আশাকরি সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা এই আর্টিকেল থেকে জানবো আজানের জবাব এবং আজানের জবাবের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত। তাই আপনি নিশ্চয় আজানের জবাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান। 


তাহলে এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পযন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে চলুন আজানের জবাব দেওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।

পোস্ট সূচীপত্রঃ আজানের জবাব দেওয়ার সঠিক নিয়ম

আজানের জবাব

বন্ধুরা আজানের সময় কোন জবাব দিবো আমরা অনেকেই সঠিক নিয়ম জানি না। যার কারণে কেউ জিজ্ঞাসা করলেও সঠিক উত্তর দিতে পারি না। তাহলে চলুন জেনে নেই আজানের জবাব কি? আজানের জবাব হচ্ছে মুয়াজ্জিন আজানের প্রত্যেকটি বাক্য বলে থামার পর শ্রোতাও আজানের বাক্যটি নিজেও অনুরূপভাবে বলবে। কিন্তু মুয়াজ্জিন যখন ‘হাইয়্যা আলাস সালাহ’ ও ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বলার সময় শ্রোতা ‘লা হাওলা ওয়া লা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলবে। এই জবাব শুধু ফজর আজান বাদে সমস্ত ওক্তের আজানের জবাব।

আজানের জবাব ও দোয়া

প্রিয় বন্ধুরা আমরা ইতি মধ্যে আজানের জবাব সম্পর্কে জেনেছি। এখন জানবো আজানের দোয়া সম্পর্কে, আজান ও ইক্বামতের মধ্যকার সময়টি দোয়া কবুলের অন্যতম সময়। এ সময়ের কোনো চাওয়াই আল্লাহ তাআলা ফেরত দেন না।

আরো পড়ুনঃ সূরা আল বাকারা শেষ তিন আয়াত বাংলা উচ্চারণ ও ফজিলত

হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আজান ও ইক্বামতের মাঝে যে দোয়া করা হয়, তা ফেরত দেয়া হয় না।’ (মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ) মুয়াজ্জিনের সঙ্গে আজানের শব্দগুলো বলার নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি। অতঃপর তিনি দোয়া করতে বলেছেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসুল! মুয়াজ্জিনদের মর্যাদা যে আমাদের চেয়ে বেশি হয়ে যাবে, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমিও তা-ই বল, মুয়াজ্জিন যা বলে। তারপর আজান শেষ হলে (আল্লাহর কাছে) চাও। (তখন) যা চাইবে তা-ই দেয়া হবে।’ (আবু দাউদ, মেশকাত) আজান ও ইক্বামতের উত্তর দেয়ায় রয়েছে জান্নাত লাভের ঘোষণা। অপর একটি বর্ণনায় এসেছে-

‘মুয়াজ্জিনের সঙ্গে সঙ্গে যে ব্যক্তি আজানের শব্দগুলো বলবে, সে জান্নাতে যাবে।’ (আবু দাউদ, মেশকাত) মুয়াজ্জিনের আজানের জবাব দেয়ার পর তাওহিদ ও রেসালাতের সাক্ষ্য দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দার সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন বলেও ঘোষণা দেন বিশ্বনবি। হাদিসের এক বর্ণনায় বলা হয়েছে-
‘যে ব্যক্তি আজান শোনার পর বলবে-

أشْهَدُ أَنْ لَّا إلَهَ إلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ وَ أشْهَدُ أنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَ رَسُوْلُهُ رَضِيْتُ بِاللهِ رَبًا وَّبِمُحَمَّدٍ رَّسُوْلاً وَبِالإسْلَامِ دِيْنًا

উচ্চারণ : ‘আশহাদু আললা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু; রাদিতু বিল্লাহি রাব্বাও ওয়া বিমুহাম্মাদির রাসুলাও ওয়া বিল ইসলামে দ্বীনা।’

অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এক আল্লাহ ব্যতিত কোনো উপাস্য নেই, তার অংশীদার নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল। আমি আল্লাহকে রব হিসেবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসুল হিসেবে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মেনে নিয়েছি।
তাহলে তার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, মিশকাত)

আজানের জবাব বাংলা

ময়াজ্জিন যখন আজান দেয় তখন আরবিতে আজান দেয় কিন্তু এর বাংলা সম্পর্কে চলুন জেনে নেই। মুয়াজ্জিন যখন বলে “আল্লাহু আকবার” এর বাংলা হচ্ছে ”আল্লাহ সর্বশক্তিমান”। মুয়াজ্জিন যখন বলে
”আশহাদু-আল লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর বাংলা হচ্ছে আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। “আশহাদু-আন্না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” বাংলা অর্থ হচ্ছে আমি সাক্ষ্য তেছি যে, মুহাম্মাদ ( সঃ) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল। ”হাইয়া আলাল ফালা” বাংলা অর্থ ”সাফল্যের জন্য এসো”। আস সালাতু খাইরুম মিনান্নাওম” বাংলা অর্থ ঘুম হতে নামাজ উত্তম।

আরো পড়ুনঃ আরো পড়ুনঃ নাপাক অবস্থায় যে যে কাজ করা যাবেনা বিস্তারিত জেনে নিন

আপনি যখন বাংলা জবাব দিয়ে উত্তর দিতে চাইবেন তখন এই বাংলা জবাব দিতে পারেন, তবে আরবিতেই সবথেকে ভালো। শুধু ফজরের আজানের জবাব একটু বেশি দিতে হয়।

ফজরের আজানের জবাব

বন্ধুরা চলুন ফজরের আজানের জবাব জেনে নেই। আপনার সুবিধার্থে নিচে ছবিসহ দেওয়া হলো:

আজানের জবাব কিভাবে দিবো

প্রিয় বন্ধুরা আমরা ইতি মধ্যে জেনেছি কিভাবে আজানের জবাব দিতে হয়। মুয়জ্জিন যখন আজান দেন এবং সেই জবাবই দিতে হবে শুধু ফজরের আজারে ক্ষেত্রে একটু বেশি বলতে হয়। মুয়াজ্জিনের আজান শেষ হবার সাথে সাথে আজানের জবাব দিতে হবে। আশাকরি আপনি বুঝতে পেরেছেন।

আজানের জবাব দেওয়ার ফজিলত

নামাযের আযানের উত্তর দেওয়া (আযান) ইসলামে অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করে এবং এটি একটি পুণ্যময় এবং পুরস্কারমূলক কাজ বলে বিবেচিত হয়। আজানে সাড়া দেওয়াকে নেক আমল হিসেবে গণ্য করার কিছু কারণ এখানে রয়েছে:

আল্লাহর আনুগত্য: আযানের জবাব দেওয়াকে আল্লাহর হুকুমের আনুগত্য হিসেবে দেখা হয়। এটি উপাসনা ও প্রার্থনায় নিয়োজিত হওয়ার জন্য ঐশ্বরিক আহ্বানের প্রতি একজন মুসলমানের জমা দেওয়ার প্রতীক।

নামাযের প্রস্তুতি: আযান সালাতের সময় শুরুর ইঙ্গিত দেয় এবং এর জবাব দেওয়া ফরজ সালাতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার একটি উপায়। এটি উপাসনার কাজে জড়িত হওয়ার আগে একটি নিবদ্ধ এবং মননশীল মানসিকতা তৈরি করতে সহায়তা করে।

সম্প্রদায়ের ঐক্য: আজানের সম্মিলিত প্রতিক্রিয়া মুসলমানদের মধ্যে সম্প্রদায় ও ঐক্যের বোধ জাগিয়ে তোলে। এটি একটি ভাগ করা অভ্যাস যা মানুষকে একটি অভিন্ন উদ্দেশ্যের জন্য একত্রিত করে - আল্লাহর উপাসনা।

সওয়াব ও আশীর্বাদ: এটা বিশ্বাস করা হয় যে যারা আজানে সাড়া দেয় তাদের জন্য বিশেষ বরকত ও পুরস্কার রয়েছে। নবী মুহাম্মদের ঐতিহ্য (হাদিস) প্রার্থনার আহ্বানে অবিলম্বে এবং মনোযোগ সহকারে সাড়া দেওয়ার গুণাবলীর উপর জোর দেয়।

হালাল এবং হারামের মধ্যে পার্থক্য: আজান জায়েয (হালাল) এবং নাজায়েজ (হারাম) এর মধ্যে পার্থক্য করার জন্য একটি অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে। আহ্বানে সাড়া দিয়ে, মুসলমানরা একটি ধার্মিক ও নৈতিক জীবনযাপনের প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।

কপটতা থেকে সুরক্ষা: নিয়মিত আযানের জবাব দেওয়াকে মুনাফিকির বিরুদ্ধে সুরক্ষা হিসাবে দেখা হয়। এটি উপাসনায় আন্তরিকতা এবং একজনের বিশ্বাসের সাথে অকৃত্রিম সংযোগকে উৎসাহিত করে।

এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে আজানের প্রতি সাড়া দেওয়া অত্যন্ত বাঞ্ছনীয়, ইসলামের বিভিন্ন চিন্তাধারার মধ্যে এর উপর নির্দিষ্ট অনুশীলন এবং জোর দেওয়া ভিন্ন হতে পারে। যাইহোক, সাধারণ ঐকমত্য হল যে প্রার্থনার আহ্বানে সাড়া দেওয়া একটি পুণ্যময় এবং আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ করার কাজ।

আজানের জবাব দেওয়া কি ওয়াজিব

আযানের (নামাজের ডাক) সাড়া দেওয়াকে ইসলামে বাধ্যতামূলক (ওয়াজিব) না করে সাধারণত সুপারিশ (মুস্তাহাব) বলে মনে করা হয়। নামাযের জন্য আযান হল নামাযের সময় শুরু হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার একটি উপায় এবং এতে সাড়া দেওয়া একটি পুণ্য ও প্রশংসনীয় কাজ হিসেবে অত্যন্ত উৎসাহিত।

যদিও আযানে সাড়া দেওয়ার সুপারিশের বিষয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে, ইসলামের বিভিন্ন মাযহাবের মধ্যে জোর দেওয়ার মাত্রা এবং নির্দিষ্ট বিধিবিধান পরিবর্তিত হতে পারে। কিছু স্কুলে, এটিকে আরও জোরালোভাবে সুপারিশ করা হতে পারে, অন্যদের ক্ষেত্রে, এটিকে কম জোর দেওয়া হলেও এখনও উত্সাহিত অনুশীলন হিসাবে দেখা যেতে পারে।

এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে ইসলামে কাজগুলি প্রায়শই বাধ্যবাধকতা এবং সুপারিশের বিভিন্ন স্তরে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। ওয়াজিব বলতে সাধারণত বাধ্যতামূলক কাজগুলিকে বোঝায়, যেখানে মুস্তাহাব বলতে সুপারিশ করা হয় এবং সওয়াব নিয়ে আসে কিন্তু বাধ্যতামূলক নয়। আযানের প্রতিক্রিয়া সুপারিশকৃত কর্মের বিভাগে পড়ে।

ইসলামিক অনুশীলনের অনেক দিকগুলির মতো, বিশদ বিবরণ পরিবর্তিত হতে পারে এবং ব্যক্তিরা তাদের নির্দিষ্ট চিন্তাধারা বা তাদের ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের শিক্ষার নির্দেশনা অনুসরণ করতে পারে। যাইহোক, সামগ্রিক ঐক্যমত হল যে, আযানে সাড়া দেওয়া ইসলামে একটি প্রশংসনীয় এবং পুণ্যের কাজ।

আমাদের শেষ কাথা - আজানের জবাব দেওয়া সঠিক নিয়ম

বন্ধুরা আমারা যতদুর সম্ভাব চেষ্টা করেছি। আপনি যদি আমাদের এই আর্টিকেলটি থেকে আপনার কোন উপকারে আসে তাহলে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। আর আপনার যদি এই আর্টিকেল থেকে কোন ধরনের মন্তব্য থাকে তাহলে অশ্ব্যই কমেন্ট করে জানবেন, ধন্যবাদ।

আরো পড়ুনঃ আরো পড়ুনঃ রমজান মাসের শ্রেষ্ট আমল ও ফজিলত

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url