ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা - ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে

ডেঙ্গু জ্বর হচ্ছে এক ধরনের এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত গ্রীষ্মকালীন রোগ। ডেঙ্গু জ্বর এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের ৩ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে উপসর্গ গুলো দেখা যায়। ডেঙ্গু জ্বর হলে সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এটি মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর
ডেঙ্গু জ্বর
ডেঙ্গু জ্বরের রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। দুই থেকে সাত দিনের মাঝে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে রোগী সুস্থ হয়ে থাকেন। ডেঙ্গু জ্বর হলে অবশ্যই আমাদের সচেতন হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নিম্নে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, ডেঙ্গু জ্বর হলে করনীয় কি ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা নিয়ে কিছু মূল্যবান তথ্য তুলে ধরা হলঃ

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ?

ডেঙ্গু জ্বর হলে কিছু সাধারণ উপসর্গ প্রকাশ হয়ে থাকে। এই উপসর্গ গুলোর মাধ্যমে খুব সহজেই ডেঙ্গু জ্বর সনাক্ত করা যায়। ডেঙ্গু হলে প্রচণ্ড পরিমাণে জ্বর এসে থাকে। এতে করে শরীরের তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২° পর্যন্ত উঠতে পারে।

ডেঙ্গুর জ্বর একটানা অনেকদিন থাকতে পারে, পরে ঘাম হয়ে জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পর আবারো জ্বর আসতে পারে। তাছাড়া মাথাব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা, ও চামড়ায় লালচে দাগের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ডেঙ্গু রোগীদের কোন উপসর্গ ছাড়াই ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে। 

ডেঙ্গু জ্বর খুব সহজেই রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে শলাক্ত করা যায়। তাই ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ দেখা দিলে সরাসরি ডাক্তারের কাছে চলে যাবেন এবং রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন।

বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ?

শিশুদের ডেঙ্গুর জ্বর হলে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে যদি সঠিক চিকিৎসা না করা হয়। বিশেষ করে অনেকে রয়েছেন যারা শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বা ডেঙ্গু জ্বর সনাক্ত করতে পারেন না।

বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বর হলে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে। যেমনঃ
  • বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বর হলে পেট ব্যাথা করবে।
  • অনবরত বমি হতে থাকবে।
  • শরীরে পানি জমা সহ মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে।
  • অতিরিক্ত দুর্বলতা ও অস্থিরতার সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
  • অনুচক্রিকা দ্রুত কমতে থাকে।

ডেঙ্গু জ্বরের ঘরোয়া চিকিৎসা | ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয়

প্রথম পর্যায়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার পাওয়া সম্ভব।ডেঙ্গু জ্বর হলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিছু বিষয় অবলম্বন করতে পারেনঃ
  • ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীকে অবশ্যই বিশ্রাম নিতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। 
  • অথবা এই সময়টাতে তরল জাতীয় খাবার বেশি করে খেতে হবে। 
  • কেননা শরীর হাইড্রেট থাকলে মাথা ব্যাথা ও পেশি ব্যাথা অনেক কমে যাবে।
  • শরীরে প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে পেঁপে পাতার রস পান করতে হবে কেননা ডেঙ্গু রোগীর শরীরে প্লাটিলেটের মাত্রা অনেক কমে যায়। 
  • পেঁপে পাতার রস সংক্রমণ তাড়াতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • ডেঙ্গু জ্বর হলে পেয়ারার শরবত পান করা যেতে পারে। 
  • কেননা পেয়ারার পাতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে কাজ করতে সাহায্য করে থাকে।
  • রক্তে প্লাটিলেট বাড়াতে নিম পাতার রস পান করা যেতে পারে। 
  • এটি শ্বেতকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। যা রোগ দমন করতে দারুন কার্যকরী।
  • ডেঙ্গু জ্বর নিরাময় করতে পুদিনা পাতার রস খাওয়া যেতে পারে। 
  • কেননা এটি সংক্রমণের সময় জ্বর  কমাতে পারে ও প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
  • ডেঙ্গু জ্বর থেকে রক্ষা পেতে তুলসীপাতার সাথে গোল মরিচের সাথে পানি সিদ্ধ করে ঠান্ডা করে পান করতে পারেন। 
  • এটি সংক্রমনের বিরুদ্ধে দারুণ কাজ করে থাকে। তাছাড়া কেউ চাইলে সরাসরি তুলসী পাতা চিবাতেও পারেন।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে?

ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীকে স্বাভাবিকভাবে সব ধরনের নরম খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তাররা। এর সাথে ডেঙ্গু রোগীরা বাড়িতে ফলের জুস, স্যুপ,ডাবের পানি, ওর স্যালাইন, ও অন্যান্য তরল খাবার প্রচুর পরিমাণে খেতে বলা হয়ে থাকে। 

আরো পড়ুনঃ

কেননা এগুলো শরীরে পানি ও ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। ডেঙ্গু জ্বর হলে হলুদ, মেথি, ব্রকলি, পালং শাক, কিউই ফল, এগুলো খাওয়া যেতে পারে। এই খাবারগুলো ডেঙ্গু জ্বর দ্রুত সারাতে কাজ করে থাকে এবং অনেক ডাক্তার এই খাবারগুলো খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডেঙ্গু রোগীদেরকে।

ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাসের নাম কি?

অনেকেই ডেঙ্গু জ্বর কোন ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে এই বিষয়ে জানেন না। এডিশ মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাসের নাম হচ্ছে ডেঙ্গু ভাইরাস।

কোন মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়?

ডেঙ্গু থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে হলে অবশ্যই কোন মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয় এই বিষয়ে জানতে হবে। ডেঙ্গুর জীবাণু বাহি মশার নাম এডিস এজিপ্টি।সাধারণ মানুষ অনেকেই এই মশাটাকে ডেঙ্গু মশা হিসেবে চিনে থাকেন।

মশা কামড়ানোর কতদিন পর ডেঙ্গু হয়?

সাধারণত ডেঙ্গু ভাইরাসবাহি এডিস মশা কামড়ানোর  ৩ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে হঠাৎ করে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসে থাকে। ডেঙ্গু জ্বর হলে একেবারে শরীরে তাপমাত্রা ১০২ থেকে ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো সাধারণত দুই থেকে সাত দিন সময় পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে।

ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ?

ডেঙ্গু জ্বর ছোঁয়াচে কিনা এই নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। যারা জানেন না তাদের অবশ্যই জানা জরুরি যে ডেঙ্গু জ্বর ছোঁয়াচে নয়। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে, একই বিছানায় ঘুমালে, বা তার কোন জিনিস ব্যবহার করলে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। 

এই রোগ শুধুমাত্র তখনই হয়ে থাকে যখন এডিস মশা ডেঙ্গুবাহী জীবাণু বহন করে কাউকে কামড় দিয়ে থাকে।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে?

ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ করেই অনেক বেড়ে যায়। যার কারণে অনেকের প্রশ্ন ডেঙ্গু জ্বর হলে গোসল করা যাবে কিনা। ডেঙ্গু জ্বর হলে ঠান্ডা পানিতে গোসল করা যাবে তবে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে গোসল সেরে ফেলতে হবে। 

আরো পড়ুনঃ 

ডেঙ্গু জ্বর হলে হালকা গরম পানিতে গোসল করতে পারেন এতে করে শরীরের তাপমাত্রা ঠিক থাকবে।বিশেষ করে শিশুদের যদি ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে তাহলে বেশি সময় ধরে ঠান্ডা পানিতে গোসল করালে তাদের শরীরের তাপমাত্রা অনেক কমে যেতে পারে। এতে করে আরো বেশি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে?

ডেঙ্গু জ্বর হলে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকরা তিন দিন পর রোগীকে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করতে বলে থাকেন। এই পরীক্ষার মাধ্যমে ননস্ট্রাকচারাল প্রোটিন দেখা যায়। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু হলে সাধারনত রোগীর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে পাঁচ থেকে সাত দিনের মতো সময় লাগে।

অনেকের এর থেকে অনেক বেশি সময়ও লাগতে পারে। তবে ডেঙ্গু জ্বর হলে কখনোই রোগীকে সুস্থ হতে ১০ দিনের বেশি সময় লাগে না।

ডেঙ্গু মশা কামড়ানোর সময় | ডেঙ্গু মশা কামড়ালে কি ফুলে যায়

অনেকের ধারণা রয়েছে ডেঙ্গু মশা শুধুমাত্র দিনের বেলায় কামড়িয়ে থাকে। যারা এটা মনে করে থাকেন তাদের ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল এডিস মশা এখন দিনে ও রাতে দুই সময়েই কামড়াতে পারে। বিশেষ করে রাতে যদি ঘর অনেক আলোকিত থাকে তাহলে এডিস মশা কামড়াতে পারে।

আরো পড়ুনঃ 

তাছাড়া ডেঙ্গু মশা কামড়ালে আক্রান্ত স্থানটি খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে অবশ হয়ে যায় ।কিছুক্ষণের মধ্যে অবাস ভাব চলে গেলেও যে স্থানে কামড়িয়েছে সেই স্থানটা ফুলে যায় ও চুলকায়।অর্থাৎ ডেঙ্গু মশা যে স্থানে কামড়িয়েছে সে স্থানটা অনেকটা মটর দানার মত ফুলে যায়।

ডেঙ্গু রোগের ওষুধ?

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি ঔষধ খেতে হবে বা ডেঙ্গু জ্বরের ঔষধের নাম কি এই বিষয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। ডেঙ্গু জ্বর হলে সাধারণত রোগী ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করলে ও কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে অল্প সময়ের মধ্যে এভাবেই সুস্থ হয়ে যেতে পারে। 

তবে রোগীর অবস্থা যদি আশঙ্কাজনক হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা যেতে পারে।

ডেঙ্গু পরীক্ষার খরচ?

ডেঙ্গু জ্বরের ধরন সাধারনত পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। ডেঙ্গু পরীক্ষা করার জন্য সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১০০ টাকা ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ৩০০ টাকা নেওয়া হয়ে থাকে।

ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে ও হঠাৎ করে জ্বর আসলে অবশ্যই ডেঙ্গু পরীক্ষা করে নিতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর পরীক্ষা করা হয়ে গেলে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করে ও ঘরোয়া কিছু পদ্ধতিতে কিছু খাবার খাওয়ার মাধ্যমে খুব সহজেই এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। 

তবে অবশ্যই এই সময়টাতে রোগীকে সঠিকভাবে বিশ্রাম নিতে হবে ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url