সিটি ব্যাংক লোন - সিটি ব্যাংক লোন সিস্টেম

সিটি ব্যাংকের গ্রাহকরা সিটি ব্যাংক থেকে বর্তমানে অনেক ধরনের লোন সুবিধা পাচ্ছেন। সিটি ব্যাংক থেকে কয়েক ধরনের লোন পাওয়া যায়। সিটি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার পদ্ধতি অনেক সহজতর হওয়ায় অনেকে সিটি ব্যাংকে লোন আবেদন করে থাকেন।
সিটি ব্যাংক
সিটি ব্যাংক
তবে সিটি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার আগে অবশ্যই সিটি ব্যাংক লোন পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক সিটি ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় সম্পর্কে।

সিটি ব্যাংক থেকে কয় ধরনের লোন পাওয়া যায়? 

সিটি ব্যাংক লোনের প্রকারভেদ বা সিটি ব্যাংক থেকে কয় ধরনের লোন সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে এই বিষয়ে সর্বপ্রথম পরিপূর্ণ ধারণা নিতে হবে। বর্তমানে সিটি ব্যাংকের গ্রাহকরা কয়েক ধরনের লোন সিটি ব্যাংক থেকে নিতে পারছেন। যেমনঃ
  • সিটি ব্যাংক হোম লোন
  • সিটি ব্যাংক পার্সোনাল লোন
  • সিটি ব্যাংক বাইক লোন
  • সিটি ব্যাংক অটো লোন
  • সিটি ব্যাংক প্রবাসী লোন
সিটি ব্যাংকের গ্রাহকরা চাইলে উপরোক্ত খাত গুলোর জন্য সিটি ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন। তবে সিটি ব্যাংকের গ্রাহকদের এই সকল লোন সুবিধা গুলো নিতে হলে কিছু শর্তাদি পালন করতে হবে। নিচে এই বিষয়েই বিস্তারিত আলোচনা করা হলঃ

সিটি ব্যাংক হোম লোন পদ্ধতি?

সিটি ব্যাংকের গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে নতুন বাড়ি তৈরি করতে পারবেন। কেননা সিটি ব্যাংক থেকে এখন বাড়ি করার জন্য হোম লোন চালু হয়েছে। সিটি ব্যাংক থেকে সর্বনিম্ন ৫ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা পর্যন্ত হোম লোন সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। 

হোম লোনের কিস্তি এক বছর থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়। সিটি ব্যাংক হোম লোন নেওয়ার যোগ্যতা নিচে তুলে ধরা হলঃ
  • সিটি ব্যাংক থেকে হোম লোন নিতে হলে বয়স সীমা ২২ বছর থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
  • যেকোনো কাজের বিষয়ে দক্ষতা অবশ্যই তিন বছরের থাকতে হবে অথবা প্র্যাকটিস এক্সপেরিয়েন্স থাকতে হবে।
  • লোননকৃত ব্যক্তি যদি সরকারি চাকরিজীবী হয়ে থাকেন তাহলে তার মাসিক বেতন ৩০ হাজার টাকার উপরে হতে হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যদি চাকরি রত থাকেন তাহলে তার মাসিক বেতন ৫০০০০ টাকার উপরে হতে হবে।
তাছাড়া সিটি ব্যাংক থেকে হোম লোন নেওয়ার জন্য কিছু ডকুমেন্টের প্রয়োজন হবে যেগুলো ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে প্রমাণ হিসেবে থাকবে। যেমনঃ
  • লোন আবেদনকারী ব্যক্তির পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও নমিনীর ছবি লাগবে।
  • আবেদনকারী ব্যক্তির এনআইডি কার্ডের ফটোকপি ও নমিনীর এনআইডি কার্ডের ফটোকপি লাগবে।।
  • ভিসিটিং কার্ড /ব্যবসায়িক কার্ড অথবা অফিস কপির মধ্যে যেকোনো একটি দিতে হবে।
  • টিএন সার্টিফিকেট ও ইউনিটিবিল এর কপি লাগবে।
  • সম্প্রতি ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট লাগবে।
তাছাড়া হোম লোন নেওয়ার জন্য আরও কি কি লাগবে সেগুলো নিচের ছবি থেকে দেখে নিতে পারেন।

সিটি ব্যাংক পার্সোনাল লোন পদ্ধতি?

সিটি ব্যাংক থেকে পার্সোনাল কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য যে লোন সুবিধা পাওয়া যায় সেটাকে সিটি ব্যাংক পার্সোনাল লোন বলা হয়ে থাকে। সিটি ব্যাংকে পার্সোনাল লোনের যে সুবিধাটি রয়েছে এর মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তি সর্বনিম্ন ৫ লক্ষ টাকা থেকে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন নিতে পারবেন। 

সিটি ব্যাংক থেকে নেওয়া পার্সোনাল লোন ১২ মাস থেকে শুরু করে ৬০ মাসের মধ্যে পরিশোধ করা লাগবে। সিটি ব্যাংক থেকে পার্সোনাল লোন নেওয়ার জন্য কিছু শর্তাদি রয়েছে সেগুলো নিচে দেওয়া হলোঃ
  • ব্যক্তির বয়সসীমা ২২ বছর থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে।
  • যে কাজের জন্য সিটি ব্যাংক থেকে লোন নিচ্ছেন সেই কাজের ওপর অবশ্যই দুই বছরের প্র্যাকটিস এক্সপেরিয়েন্স থাকতে হবে।বিজনেসম্যান হয়ে থাকলে কমপক্ষে তিন বছরের এক্সপেরিমেন্স থাকতে হবে
  • যেকোনো স্যালারিতে যদি কাজ করে থাকেন তাহলে সেই কাজের স্যালারির উপর কমপক্ষে ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট লাগবে।
তাছাড়া সিটি ব্যাংক থেকে লোন নিতে হলে কিছু ডকুমেন্টের প্রয়োজন রয়েছে যেগুলো ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জমা নিয়ে থাকে সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
  • আবেদনকারী ব্যক্তির ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং নমীনির দুই কপি ছবি লাগবে।
  • লোন গ্রহীতার ও নমীনীর এন আই ডি অথবা স্মার্ট কার্ডের ফটোকপি লাগবে।
  • ভিজিটিং কার্ড /ব্যবসায়িক কার্ড ও অফিস কপি প্রয়োজন হবে।
  • সর্বশেষ ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট লাগবে।ব্যবসায়ী হলে সর্বশেষ এক বছরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে এবং ট্রেড লাইসেন্স লাগবে।
আপাতত সিটি ব্যাংক পার্সোনাল লোন নেওয়ার জন্য লোন ফরমের সাথে এই ডকুমেন্টগুলো জমা দিলেই হয়। তবুও ব্যাংকের শাখা থেকে এই বিষয়ে বিস্তারিত ফরম জমা দেওয়ার আগে জেনে নিতে পারবেন।

সিটি ব্যাংক বাইক লোন পদ্ধতি?

সিটি ব্যাংকের গ্রাহকরা সিটি ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে চাইলে বাইক বা মোটরসাইকেল কিনতে পারবেন। সিটি ব্যাংক বাইক লোনের যে সুবিধাটি রয়েছে সেটির মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন নেওয়া যাবে।

বাইক লোন নেওয়ার পর সর্বোচ্চ ৩৬ মাসের মধ্যে লোন পরিশোধ করতে হবে। সিটি ব্যাংক বাইক লোন পাওয়ার জন্য যোগ্যতা কেমন হবে সেই বিষয়ে জেনে নেওয়া যাকঃ
  • আবেদনকারী ব্যক্তির বয়সসীমা সর্বনিম্ন ২১ বছর থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
  • যেকোনো কাজ করার আগে অবশ্যই স্যালারি পার্সন হিসাবে আপাতত এক বছর নিয়োজিত থাকতে হবে। অর্থাৎ একজন ফ্রিল্যান্সার, বিজনেসম্যান অথবা অন্যান্য কর্মকর্তা হলে সর্বনিম্ন এক বছর চাকরি দেখাতে হবে।
  • রাইড শেয়ারিং এর জন্য ছয় মাসের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
  • বেতনভুক্ত কর্মচারী হলে প্রতি মাসে ১২ হাজার টাকার ওপরে ইনকাম থাকতে হবে এবং ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকলে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা ইনকাম থাকতে হবে। বিদেশি ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে মাসে ২০ হাজার টাকা ইনকাম হলেই হবে।
এই যোগ্যতা গুলি যদি আপনার ভিতরে থেকে থাকে তাহলে খুব সহজেই সিটি ব্যাংকের শাখায় গিয়ে লোন ফরম নিয়ে সেটি সঠিকভাবে পূরণ করে বাইক লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং লোন পেয়ে যাবেন।

সিটি ব্যাংক অটো লোন পদ্ধতি?

সিটি ব্যাংকের গ্রাহকরা চাইলে অটো লোন সুবিধাটি নিতে পারেন। অর্থাৎ পছন্দের যেকোনো কাজ সম্পন্ন করার জন্য সিটি ব্যাংক থেকে অটো লোন দেওয়া হয়ে থাকে। সিটি ব্যাংক থেকে সর্বনিম্ন ৩ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অটো লোনের মাধ্যমে নিতে পারবেন। 

অটো লোন নিয়ে সর্বনিম্ন ১২ মাস থেকে ৭২ মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।সিটি ব্যাংক অটো লোন নেওয়ার যোগ্যতা নিচে তুলে ধরা হলোঃ
  • সিটি ব্যাংক থেকে অটো লোন নিতে হলে আবেদনকারী ব্যক্তির বয়স সর্বনিম্ন ২২ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৬৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
  • যেকোনো কাজের ওপরে সর্বনিম্ন এক বছরের ব্যবসায়িক এক্সপেরিয়েন্স থাকতে হবে।
  • ব্যবসায়ী হয়ে থাকলে যে কোন ব্যবসার সাথে অন্তত দুই বছরের ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন এর প্রমাণ দেখাতে হবে।
  • সিটি ব্যাংক থেকে অটো লোন নিতে হলে মাসিক বেতন অবশ্যই ৪০ হাজার টাকার উপরে হতে হবে।এই লোনের ক্ষেত্রে কোনো পার্সোনাল গ্যারানটার প্রয়োজন নেই।
আপনার যদি উপরোক্ত যোগ্যতা গুলো থেকে থাকে তাহলে সরাসরি সেটি ব্যাংকের শাখায় গিয়ে লোন ফরম সংগ্রহ করে কিছু ডকুমেন্ট জমা দিয়ে সিটি ব্যাংক অটো লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

সিটি ব্যাংক প্রবাসী লোন পদ্ধতি? 

সিটি ব্যাংক থেকে যে প্রবাসী লোন সুবিধা টি চালু করা হয়েছে তার নাম হচ্ছে সিটি ব্যাংক রেমিট্যান্স লোন।প্রবাসী লোনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত লোন নিতে পারবেন সিটি ব্যাংক থেকে।সিটি ব্যাংক থেকে প্রবাসী লোন নিতে হলে যে শর্তাবলী গুলো পালন করতে হবে বা কেমন যোগ্যতা লাগবে এই বিষয়ে নিচে ধারণা দেওয়া হলোঃ
  • প্রবাসীর মনোনীত প্রতিনিধিরা সিটি ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন এবং যারা প্রবাসে রয়েছেন তাদের আয়ের ওপর নির্ভর করে সিটি ব্যাংক থেকে প্রবাসী লোন দেওয়া হচ্ছে।
  • গৃহপালিত পশু ক্রয়, কৃষি উন্নয়ন ও যন্ত্রপাতি ক্রয়, গৃহ নির্মাণ ও মেরামত কাজে রেমিটেন্স লোন পাওয়া যাবে।
  • সিটি ব্যাংকের যেকোনো এজেন্ট পয়েন্ট থেকে ফরম সংগ্রহ করে ডকুমেন্ট জমা দিয়ে সিটি ব্যাংক রেমিটেন্স লোন নেওয়া যাবে।

সিটি ব্যাংক লোন সুদের হার?

সিটি ব্যাংক লোনের সুদের হার কত বাত কত টাকা পর্যন্ত লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে সুদ প্রযোজ্য হয়ে থাকে এই বিষয়ে অনেকেই জানতে চান। সিটি ব্যাংক থেকে যারা লোন সুবিধা নিয়ে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে সুদের হার সর্বনিম্ন ৯ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত নেওয়া হয়ে থাকে। 

তবে যে সকল ব্যক্তি সঠিক সময়ে লোন পরিশোধ করেন না তাদের ক্ষেত্রে পরবর্তীতে সুদের পরিমাণটা কিছুটা বাড়তে পারে।

সিটি ব্যাংক মোবাইল নাম্বার?

অনেকের সিটি ব্যাংক লোন সম্পর্কে অনেক কিছু জানার থাকে যার কারণে অনলাইনের মাধ্যমে যোগাযোগ করার জন্য মোবাইল নাম্বার প্রয়োজন হয় । সিটি ব্যাংকের কাস্টমার সার্ভিসের মাধ্যমে সকল সুবিধা পেতে ও প্রয়োজনীয় তথ্য জানার জন্য ১৬২৩৪ নাম্বারে ফোন করতে পারেন। 

এই নাম্বারে কল করার মাধ্যমে ২৪ ঘন্টা সকল ধরনের পরিষেবা পাবেন। তাছাড়া যারা বিদেশ থেকে কল পরিষেবা সুবিধাটি পেতে চান +88-02-8331040 সরাসরি এই নাম্বারে ফোন করতে পারেন।

শেষ কথা, সিটি ব্যাংক লোন পাওয়ার নিয়ম ও সিটি ব্যাংক লোন সুবিধা সম্পর্কে ইতিমধ্যে জানা হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া আজকের পোস্টে খুবই সহজ ভাবে বোঝানো হয়েছে সিটি ব্যাংক থেকে কিভাবে সহজ শর্তে লোন পাওয়া যায়। 

তারপরেও যদি এই বিষয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url