মালটা ভিসা | মাল্টা যেতে কি কি লাগে

মাল্টা অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত একটি দেশ। পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে প্রতিবছর মাল্টাতে কাজের উদ্দেশ্যে হাজার হাজার লোক যেয়ে থাকেন। মাল্টাতে যেতে হলে অবশ্যই একটি বৈধ ভিসার প্রয়োজন রয়েছে। 

মালটা
মালটা
আজকের পোস্টে মাল্টা ভিসা পাওয়ার উপায়, মাল্টা ভিসা পেতে কি কি লাগে ও মাল্টা ভিসা খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাকঃ

মালটা ভিসা পাওয়ার সহজ উপায়?

মাল্টাতে যাওয়ার জন্য বেশ কয়েক ধরনের ভিসা দেওয়া হয়ে থাকে। যেমন মালটা টুরিস্ট ভিসা, মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, মাল্টা স্টুডেন্ট ভিসা। 

প্রথমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন ভিসায় মালটা যেতে চান। নিচে মাল্টাতে যাওয়ার জন্য এই জনপ্রিয় তিনটি ভিসা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হলোঃ

মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা?

মাল্টাতে অনেক সময় বিভিন্ন কাজের জন্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মাধ্যমে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। তখন বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মীরা চাইলে অনলাইনে অথবা এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন মালটা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার জন্য। মালটা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মাধ্যমে আপনারা সেখানে গিয়ে নির্দিষ্ট কিছু সময় পর্যন্ত কাজ করতে পারবেন।

মাল্টা স্টুডেন্ট ভিসা?

মাল্টাতে পড়াশোনা করার জন্য বহিরাগত ছাত্রদের স্টুডেন্ট ভিসা প্রদান করা হয়ে থাকে। মালটা স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে নির্দিষ্ট মেয়াদে পড়াশোনা করার জন্য থাকতে পারবেন। কোর্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে পরবর্তীতে মালটা থেকে চলে আসতে হবে।

তবে কোন ব্যক্তি যদি চাই তাহলে মালটাতে স্টুডেন্ট ভিসায় গিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করতে পারবেন।মালটাতে স্টুডেন্ট ভিসায় যাওয়ার জন্য অনলাইনের মাধ্যমেই আবেদন করা যায়।

মাল্টা ভ্রমণ ভিসা?

মালটা ইউরোপ মহাদেশের একটি দেশ। প্রতিবছর অনেকেই মাল্টাতে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে এসে থাকেন। মালটাতে ভ্রমণ করতে হলে অবশ্যই মালটা টুরিস্ট ভিসার দরকার হবে। 

মালয়েশিয়া ট্যুরিস্ট ভিসা চাইলে যে কোন ব্যক্তি এজেন্সির মাধ্যমে অথবা অনলাইন থেকে আবেদন করে নিতে পারবেন।মাল্টা ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে সর্বনিম্ন ৩০ দিন থেকে সর্বোচ্চ ৬০ দিন পর্যন্ত ভ্রমণ করা যাবে ।

মাল্টা যেতে কি কি লাগে?

মালটা যেতে হলে অবশ্যই বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা লাগবে।তাছাড়া জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, পাসপোর্টে নূন্যতম ছয় মাসের মেয়াদ ও বয়স নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে হতে হবে। তারপরে বেসরকারিভাবে যদি মাল্টা যেতে চান তাহলে কোন এজেন্সির মাধ্যমে যেতে পারেন আর যদি সরকারিভাবে মালটাতে যেতে চান তাহলে অনলাইনের মাধ্যমে এই সকল ডকুমেন্টগুলো ব্যবহার করে আবেদন করতে পারেন।

মালটা যেতে কত টাকা লাগে?

মালটা যেতে কত টাকা লাগে বা বাংলাদেশ থেকে মালটাতে যেতে হলে কোন ভিসার জন্য কত টাকা খরচ পড়তে পারে এই বিষয়ে অনেকেরই জ্ঞান নেই। যেহেতু মালটাতে একেক জন একেক ধরনের ভিসার মাধ্যমে যাই তাই এখানে খরচের পরিমাণটা অবশ্যই কম বেশি হবে। 

ধরুন কেউ যদি মালটাতে স্টুডেন্ট ভিসায় যাই তাহলে তার খরচ আলাদা হবে আবার কেউ যদি মালটাতে কাজের ভিসায় যাই তাহলে তার খরচ আলাদা হবে।নিচে মালটা ভিসার ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভিসা খরচ নিয়ে কিছুটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হলঃ

মালটা টুরিস্ট ভিসা?

মালটা ভ্রমণ ভিসায় যেতে হলে খরচের পরিমাণটা কেমন হতে পারে জানা আছে কি? বাংলাদেশ থেকে যারা মালটাতে টুরিস্ট ভিসার মাধ্যমে যেতে চান তাদের মালটা ভিসা আবেদন ফি লাগবে ১৮০ ডলারের মত।অর্থাৎ শুধুমাত্র মালটাতে ভ্রমণ ভিসার জন্য যে আবেদন প্রক্রিয়াটি আপনাকে সম্পূর্ণ করতে হবে তার জন্য আবেদন ফি জমা দিতে হবে ১৮০ ডলার।

তারপরে আরো কয়েকটি প্রসেস সম্পূর্ণ করতে হবে এতেও ভালো খরচ হয়েছে। সর্বোপরি মালটা টুরিস্ট ভিসায় ভ্রমণ শেষ করে আসতে হলে খরচ কম করে করলেও সবমিলিয়ে দুই লক্ষ টাকার মত খরচ পড়ে যেতে পারে। অর্থাৎ দুই লক্ষ টাকা যদি আপনার কাছে থেকে থাকে তাহলে মালটা ভ্রমণ সহজেই করতে পারবেন।

বাংলাদেশ থেকে মাল্টা যাওয়ার উপায়?

বাংলাদেশ থেকে বেশিরভাগ লোক দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করে মালটা গিয়ে থাকেন। (১) সরকারিভাবে  (২) বেসরকারি ভাবে।যারা সরকারিভাবে মাল্টা যায় তারা সরাসরি অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করে থাকেন এবং সেখান থেকে পাওয়া নির্দেশনা সম্পূর্ণ করে মালটাতে কাজের জন্য যান।বেসরকারিভাবে মালটাই যেতে পারেন বাংলাদেশের অনেক এজেন্সি রয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগ করে যাওয়া যায়।

তারা মালটা ভিসা প্রসেসিং থেকে শুরু করে সবকিছুর দায়িত্ব নিয়ে নিবে এবং আপনাকে কোন ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই মাল্টাতে পাঠিয়ে দিবে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মাধ্যমে। তবে কখনোই দালালের চক্করে পড়ে মালটা ভিসা করতে যাবেন না তাহলে পরবর্তীতে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।

মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা খরচ?

মালটাতে যদি কাজের উদ্দেশ্যে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যেতে হয় তাহলে সর্বনিম্ন সাত লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ আট লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। ভিসা এজেন্সির মাধ্যমে সরাসরি মালটা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা করলে এই খরচ হবে।

আর যদি দালালের হাত ধরে মালটা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে থাকেন তাহলে আপনার খরচের পরিমাণটা ১০ লক্ষ টাকার বেশি আসতে পারে। তাই অবশ্যই বাংলাদেশ সরকার দ্বারা স্বীকৃত এজেন্সির মাধ্যমে অবশ্যই মালটা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা করবেন।

মাল্টা স্টুডেন্ট ভিসা খরচ?

মালটাতে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে যেতে হলে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। অনলাইনে মালটা স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে ৩০ হাজার টাকা থেকে ৩৫ হাজার টাকার মতো খরচ আসতে পারে। তাছাড়া অনলাইনে ভিসা আসিস্ট একাউন্ট করার জন্য ১০০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকার মতো খরচ আসতে পারে। 

তবে বাংলাদেশ থেকে যদি মালটা স্টুডেন্ট ভিসা করতে চান অবশ্যই ভালো কোন এজেন্সির সহায়তা নিয়ে তারপরে করবেন। তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত বিভিন্ন ধরনের ঝামেলা থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাবেন।

মাল্টা কাজের ভিসা এক মাসের বেতন কত?

মাল্টা সরকার কয়েক ধরনের ভিসা প্রদান করে থাকে। মালটাতে সর্বনিম্ন বেতন ১০০০ ইউরো থেকে শুরু করে ১২০০ ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে।যা সাধারণত বাংলাদেশী টাকায় হিসাব করলে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার মত এসে থাকে। মাল্টাতে যারা ডাক্তারি কাজ করে থাকেন তাদের বেতন ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। 

মালটাতে  ইঞ্জিনিয়ারিং কাজের জন্য মাসে চার লক্ষ টাকা বেতন প্রদান করা হয়। তাছাড়া মালটাতে যারা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ করে থাকেন তারা প্রতি মাসে দুই লক্ষ টাকার অধিক ইনকাম করে থাকেন। মালটা তে যারা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ করে থাকেন তারা প্রতি মাসে ২ লক্ষ টাকার অধিক বেতন পান। 

মালটা তে ওয়েব ডেভেলপার ফিক্স ডিজাইনারদের বেতন মাসে দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।মালটাতে হোটেলে যারা বাবুর্চির কাজ করে থাকেন তারা সর্বনিম্ন ৯০০০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকেন।মালটাতে  যে সকল কর্মী রেস্টুরেন্টের ওয়েটার হিসেবে কাজ করে থাকেন তারা মাসে ৮০ হাজার টাকা বেতন পেয়ে থাকেন। 

মালটাতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা মাসে ৮০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বেতন পাইয়ে থাকেন।
মালটাতে যারা কাজ করে থাকেন তারা সর্বনিম্ন হলেও এই বেতন পাই। তবে অনেকেই আছেন যারা এই কাজগুলো করার পাশাপাশি আর অন্য কাজ করে থাকেন এবং আরো অনেক বেশি টাকা ইনকাম করে থাকেন। তাই মালটা দেখ এক মাসের বেতন সবার ক্ষেত্রে সমান হবে না সেটাই স্বাভাবিক।

মাল্টা এম্বাসি বাংলাদেশ কবে খুলবে?

মালটা এম্বাসি ইতিমধ্যে বাংলাদেশের চালু হয়ে গেছে। অনেকেই মালটা এম্বাসি বাংলাদেশে কোথায় এই নিয়ে জানতেন না তারা চাইলে নিচের ঠিকানা অনুসরণ করে সরাসরি মালটা এমব্যাসিতে চলে যেতে পারবেন।

মালটা এম্বাসির ঠিকানা হচ্ছে House #21, 4th Floor, Road # 17, Block #C, Banani
Dhaka-1211, Bangladesh

তাছাড়া কেউ চাইলে সরাসরি +88-02-8820388 এই ঠিকানায় ফোন করে যোগাযোগ করতে পারবেন।যদি কেউ ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে চান maltaconsul.dhaka@gov.mt তাহলে এই ঠিকানায় মেইল করতে পারবেন।

মাল্টা যেতে কত বয়স লাগে?

মালটা যেতে কত বয়স লাগে বা মালটাকে কাজের ভিসায় যাওয়ার জন্য বয়সসীমা কত হওয়া উচিত অবশ্যই মালটা যাওয়ার আগে জানা জরুরী। মালটাতে টুরিস্ট ভিসায় যেতে হলে বয়সের ক্ষেত্রে তেমন বাধ্যবাধকতা না থাকলেও মালটাতে কাজের ভিসায় যেতে হলে সর্বনিম্ন ১৮ বছর বয়স হতে হবে এবং সর্বোচ্চ ৫০ বছরের মধ্যে বয়সসীমা থাকতে হবে। তাহলেই শুধুমাত্র মালটা তে ওয়ার্ক পারভেট ভিসা বা কাজের ভিসার মাধ্যমে যাওয়া যাবে।

মাল্টা ভিসা প্রসেসিং হতে কত দিন সময় লাগে?

মালটাতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে হলে ভিসা হাতে পেতে সর্বনিম্ন তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ চার মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। যদি সকল ধরনের কাগজপত্র ঠিক থাকে তাহলে আপনাদের পাসপোর্টে মালটা ভিসার একটি স্টিকার লাগিয়ে দেওয়া হবে। 

যেহেতু মালটাতে যাওয়ার জন্য কোন ধরনের ই ভিসা দেওয়া হয় না তাই অবশ্যই কর্মীকে তার ভিসাটি সরাসরি দিয়ে নিয়ে আসতে হবে।তাহলে অবশ্যই ইতিমধ্যে জেনে গিয়েছেন যে মালটা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রসেসিং হতে কতদিন পর্যন্ত সময় লেগে থাকে।

শেষ কথা ,আশা করি ইতিমধ্যে মাল্টা ভিসা পাওয়ার উপায়,মাল্টা যেতে কত টাকা লাগে, মালটা তে কোন কাজের কেমন বেতন এই বিষয়গুলো সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। 

তারপরেও যদি মালটা ভিসা নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url