পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম - ই পাসপোর্ট রিনিউ ফি কত

ই পাসপোর্টে রয়েছে এক ধরনের ইলেকট্রনিক চিপ যার মধ্যে পাসপোর্ট হোল্ডারের সকল তথ্য সংরক্ষিত করা থাকে। ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশে ই পাসপোর্ট চালু হলেও বর্তমানে  সারা দেশে ও দেশের বাইরে E passport প্রদান চালু করা হয়েছে।
পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম
পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম
ই পাসপোর্ট ব্যবহারের সবথেকে বড় সুবিধা হলো দীর্ঘক্ষণ লাইনে বসে থাকতে হয় না ও অল্প সময়ের মধ্যেই বিনা ভোগান্তিতে ইমিগ্রেশনে সক্রিয় ই গেটের মাধ্যমে চেকিং ছাড়াই প্রবেশ করতে পারবেন।

বর্তমানে এখন যারা পাসপোর্ট করতে যাচ্ছেন তাদের এমআরপি পাসপোর্ট আর দেওয়া হচ্ছে না।  সকলকেই ই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে হয় এবং ই পাসপোর্ট নিতে হয়। ই পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে অনলাইনে ই পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য আবেদন করতে হয়।

আজকের পোস্টে ই পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম, ই পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে ও ই পাসপোর্ট খরচ কত এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য থাকবে।

ই পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম?

বাংলাদেশের সকল জেলায় এখন ই পাসপোর্ট সেবা চালু হয়ে যাওয়ায় পুরাতন এমআরপি পাসপোর্ট রিনিউ করে নতুনভাবে আবার ই পাসপোর্ট সেবা গ্রহণ করতে হবে। পাসপোর্ট রিনিউ আবেদন করা ব্যক্তিরা অনলাইনের মাধ্যমে খুব সহজেই পাসপোর্ট রিনিউ করার ফরম পূরণ করতে পারবেন।

পাসপোর্ট রিনিউ করার সময় অনেকেই ভুল তথ্য দিয়ে থাকেন তাই এই ক্ষেত্রে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে এবং পাসপোর্ট রিনিউ করার সময় প্রয়োজনীয় তথ্য অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্র অনুসারে করতে হবে।

তাছাড়া অনেকেই আছেন যারা পুরাতন পাসপোর্ট এর তথ্য সংশোধন করতে চান তারা চাইলে পাসপোর্ট রিনিউ করার করার সময় পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে পাসপোর্ট সংশোধন করার জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র, জন্ম নিবন্ধন ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ থাকতে হবে।

অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম?

পুরাতন এমআরপি পাসপোর্ট যাদের রয়েছে তাদের পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য বা ই পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদনকারী কে শুধুমাত্র আইডি ডকুমেন্ট অপশন থেকে আপনার পূর্ববর্তী এমআরপি পাসপোর্ট সিলেক্ট করে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করতে হবে। 

ই পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়মাবলী ধাপে ধাপে উল্লেখ করা হলোঃ

Step 1:

আপনাদেরকে ক্রম ব্রাউজারে চলে যেতে হবে এবং সার্চ বারে গিয়ে e-passport.gov.bd লিখে সার্চ করতে হবে। সবার উপরে যে ওয়েবসাইটটি দেখতে পাচ্ছেন সরাসরি এই ওয়েবসাইটটিতে চলে যেতে হবে।

ওয়েবসাইটিতে থেকে আসার পর apply online for e passport অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে। সিলেক্ট করার পর আপনাদের সামনে are you apply for Bangladesh অপশন থাকবে। 

এখানে আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে আবেদন করেন তাহলে yes দিবেন আর বাংলাদেশের বাইরে থেকে আবেদন করলে no দিবেন। তারপরে নিচের ঘরে District অপশনে আপনার জেলার নাম দিতে হবে ও নিচের ঘরে নিকটস্থ থানার নাম উল্লেখ করতে হবে।

Step 2: 

তারপরে continue বাটনে ক্লিক করতে হবে এবং এখানে একটি ইমেইল এড্রেস দিতে হবে। ইমেইল এড্রেস দেওয়া হয়ে গেলে i am a human বাটনে ক্লিক করে কন্টিনিউ বাটনে ক্লিক করতে হবে। 

পরবর্তী ধাপে আপনাদেরকে একটি সচল ফোন নাম্বার প্রদান করতে হবে এবং i a human বাটনে ক্লিক করে ক্রিয়েট একাউন্ট অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে।

Step 3: 

এবার আপনাদেরকে আরেকটি নতুন পেজে নিয়ে যাওয়া হবে এখানে পাসওয়ার্ড দেওয়ার অপশন থাকবে। পাসওয়ার্ডটি অবশ্যই ৬ ডিজিটের উপরে দিতে হবে এবং ক্যাপিটাল লেটার ও কিছু সংখ্যার সমন্বয় হতে হবে অনেকটা এরকম Abtp*127 দিলেও হবে। 

তারপরে রিপিট পাসওয়ার্ড এর জায়গায় ও এই পাসওয়ার্ডটি দিতে হবে। তারপরে এমআরপি পাসপোর্ট এর তথ্য অনুসারে আপনারা পাসপোর্টের নাম, ও অন্যান্য তথ্য দিয়ে create account e click করতে হবে।

Step 4: 

তারপরে আপনাদের সামনে আরেকটি নতুন পেজ আসবে এবং এখানে দেখতে পারবেন আপনি যে মেইলটি দিয়েছেন সেই মেইলটি ভেরিফিকেশন করতে হবে। 

সরাসরি মেইল বক্সে চলে যেতে হবে এবং spam অপশন থেকে মেইল টি বের করে লিংকে ক্লিক করে ভেরিফিকেশন করে নিতে হবে। এবার এখানে আপনাদের ইমেইল এড্রেস ও পাসওয়ার্ড দিয়ে সাইন ইন করতে হবে।

সাইন ইন করার পর আরেকটি নতুন ইন্টারফেস আপনাদের সামনে চলে আসবে এখান থেকে apply a new passport আসলে ক্লিক করতে হবে। এখানে দুইটি অপশন চলে আসবে ordinary passport ও officialy passport । 

এখানে আপনাদেরকে অর্ডিনারি পাসপোর্ট সিলেক্ট করতে হবে। অর্ডিনারি পাসপোর্ট কে সিলেক্ট করার পর save and continue বাটনে ক্লিক করতে হবে। 

এবার নতুন আরেকটি পেজে নিয়ে যাওয়া হবে এখানে আপনাদেরকে এমআরপি পাসপোর্ট অনুসারে ব্যক্তিগত সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। 

নিচের দিকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অপশন রয়েছে সেটি হচ্ছে citizenship । অর্থাৎ আপনি জন্মসূত্রে নাগরিক হয়েছেন কিনা এটা select করতে by birth দিয়ে দিবেন।তারপরে আপনাদেরকে save and continue বাটনে ক্লিক করতে হবে।

step 5: 

এবার নতুন আরেকটি পেজে নিয়ে যাওয়া হবে। এখান থেকে এড্রেস বা ঠিকানার সকল তথ্য এমআরপি পাসপোর্ট অনুসারে যেতে হবে। 

যদি এমআরপি পাসপোর্ট করাকালীন সময়ের সাথে এখনকার পাসপোর্ট রিনিউ করার ঠিকানা না মেলে তাহলে নতুন করে ঠিকানা এড করে নিতে পারেন। তারপরে নিচের দিকে save and continue বাটন রয়েছে সেখানে ক্লিক করতে হবে।

step 6: 

তারপরে আপনাদের সামনে আরেকটি নতুন পেজ চলে আসবে। এখানে উপরে id documents অপশন থেকে আপনি নতুন পাসপোর্ট করছেন কিনা বা পুরাতন পাসপোর্ট রিনিউ করছেন কিনা এটা সিলেক্ট করতে হবে। 

এখান থেকে আপনাদেরকে প্রথম অপশনটি অর্থাৎ yes i have a machine readable passport সিলেক্ট করতে হবে। তারপরে আপনার সামনে আরো কয়েকটি অপশন চলে আসবে অর্থাৎ আপনি পাসপোর্টটি কি জন্য রিনিউ করছেন সেগুলোর তথ্য দিতে হবে।

step 7: 

তারপরে আপনাদেরকে আগের পাসপোর্ট নাম্বারটি দিতে হবে এবং ইস্যু ডেট দিতে হবে। তারপরে পাসপোর্টটিতে যে এক্সপায়ার ডেট রয়েছে সেই এক্সপায়ার ডেটটি এখানে বসাতে হবে। নিচের দিকে এবার আপনার অন্য কোন দেশের পাসপোর্ট রয়েছে কিনা এটা যাচাই করবে। 

আপনার যদি অন্য কোন দেশের পাসপোর্ট না থেকে থাকে তাহলে No বসাতে হবে। তারপরে নিচের দিকে identified information হিসাবে জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার প্রদান করতে হবে ও save and continue বাটনে ক্লিক করতে হবে।

Step 8: 

এবার আপনাদের সামনে নতুন আরেকটি ইন্টারফেস চলে আসবে। এখানে আপনারা personal information নামক একটি ট্যাব দেখতে পারবেন যেখানে ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ করতে হবে । 

প্রথমে আপনার পিতার নাম, পিতার পেশা, মাতার নাম দিয়ে save and continue বাটনে ক্লিক করতে হবে। এই তথ্যগুলো আপনাদেরকে অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্র অনুসারে দিতে হবে।

এবার আপনি বিবাহিত কি অবিবাহিত এটা সিলেক্ট করতে হবে জরুরী কন্টাক্ট করার প্রয়োজন হলে কার সাথে করতে হবে এই তথ্য দিতে হবে। আপনি এই ক্ষেত্রে ভাইসহ অন্যান্য যেকোনো ব্যক্তি সিলেক্ট করতে পারেন। 

সিলেক্ট করা হয়ে গেলে তার ব্যক্তিগত কিছু তথ্য নিচের দিকে দিতে হবে। তারপরে নিচের দিকে তার কন্টাক্ট নাম্বার দিয়ে save and continue বাটনে ক্লিক করতে হবে। এবার আপনাদের সামনে আরেকটি ইন্টারফেস চলে আসবে। 

এখান থেকে আপনি কত পাতার পাসপোর্ট করতে চান সেটার খরচসহ সমস্ত বিবরণ দেখা যাবে। এখান থেকে আপনি কত পাতার পাসপোর্ট নিতে চান এবং কত বছরের জন্য নিতে চান সেটা সিলেক্ট করে save and continue বাটনে ক্লিক করবেন।

তারপরে আরেকটি নতুন পেজ চালু হবে। এখান থেকে আপনাকে রেগুলার ডেলিভারি অথবা express delivery সিলেক্ট করতে হবে। রেগুলার ডেলিভারিতে সাধারণত টাকার পরিমান কম লাগে এবং এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে টাকার পরিমাণ বেশি লাগে। তারপরে সিডিউল অপশনটি সিলেক্ট করে save and continue বাটনে ক্লিক করতে হবে।

step 9: 

তারপরে নতুন আরেকটি পেজ চালু হবে এবং এখানে আপনার পাসপোর্ট এর সমস্ত তথ্য চলে আসবে এখান থেকে সবকিছু ঠিকঠাক রয়েছে কিনা ভালোভাবে দেখে নিতে হবে। 

সমস্ত তথ্য ঠিক থেকে থাকে তাহলে স্ক্রল করে আপনারা একটু নিচের দিকে চলে আসবেন এবং এখানে confirm to proceed to payment সিলেক্ট করতে হবে। 

তারপরে নতুন আরেকটি পেজে নিয়ে যাওয়া হবে এবং এখান থেকে কিভাবে পেমেন্ট করতে পারবেন তার কিছু তথ্য দেওয়া থাকবে ।আপনাদেরকে স্ক্রল করে নিচের দিকে চলে আসতে হবে এবং নিচের দিকে continue বাটনে ক্লিক করতে হবে।

এবার এখান থেকে আপনাদেরকে print summary অপশনে ক্লিক করে অ্যাপ্লিকেশনটি প্রিন্ট করে নিতে হবে। যদি মোবাইলের মাধ্যমে করে থাকেন তাহলে অ্যাপ্লিকেশনটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করে নিতে পারেন।

step 10: 

এবার আপনাদেরকে আবেদনপত্রের সাথে কি কি ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে সেটা জানতে হবে। সাথে কি কি ডকুমেন্ট জমা দেওয়া লাগবে তা নিচের ছবির মাধ্যমে দেখতে পারছেন। 

এই সকল ডকুমেন্ট গুলা নিয়ে আপনি যে শিডিউল অনুযায়ী পাসপোর্টের ডেট সিলেক্ট করেছেন সেই ডেটে পাসপোর্ট অফিসে চলে যেতে হবে এবং আবেদন পত্রটি জমা দেওয়ার পাশাপাশি কিছু কাজ করে আসতে হবে।

পরবর্তীতে  আপনার পাসপোর্ট তৈরি হয়ে গেলে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে যে পাসপোর্টটি তৈরি হয়ে গিয়েছে তখন পাসপোর্ট অফিস থেকে খুব সহজে পাসপোর্টটি নিয়ে আনতে পারবেন।

পাসপোর্ট রিনিউ করার খরচ | ই পাসপোর্ট রিনিউ ফি কত

পাসপোর্ট রিনিউ করা খুবই ঝামেলার একটি কাজ। তাই যখন কেউ পাসপোর্ট রিনিউ করবেন অনলাইনের মাধ্যমে তারা অবশ্যই ১০ বছর মেয়াদী করে নিবেন। ৪৮ পাতার পাসপোর্ট যদি ১০ বছর মেয়াদী রিনিউ করে থাকেন তাহলে খরচ আসবে ৫৭৫০ টাকার মতো।

আর ৬৪ পাতার ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট করতে খরচ হবে ৮০৫০ টাকা লাগবে। আর ৬৪ পাতার পাসপোর্ট যদি পাঁচ বছর মেয়াদী রিনিউ করতে চান তাহলে ৬৩২৫ টাকা লাগবে।

পাসপোর্ট রিনিউ করতে কতদিন লাগে?

পাসপোর্ট রিনিউ করতে কতদিন সময় লাগবে এটা নির্ভর করবে আপনি রেগুলার ডেলিভারি নিবেন নাকি এক্সপ্রেস ডেলিভারি দিবেন। রেগুলার ডেলিভারি নিলে আপনার সময় অনেক বেশি লাগবে এবং এক্সপ্রেস ডেলিভারি নিলে সময় কম লাগবে। 

এক্সপ্রেস ডেলিভারি নিতে হলে এক্ষেত্রে আপনার টাকার পরিমান বেশি দিতে হবে। যারা রেগুলার করে থাকেন তাদের সাধারণত ১৫ কার্যদিবস সময় লাগে এবং ইমারজেন্সি বা এক্সপ্রেস ডেলিভারি যারা করে থাকেন তাদের সাত কার্যদিবস সময় লাগে।

শেষ কথা, আশা করি ইতিমধ্যে যারা পোস্টটি করেছেন তারা পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম ও পাসপোর্ট রিনিউ করার খরচ কত এই বিষয়ে মোটামুটি ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। 

তারপরেও যদি এই বিষয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থাকে বা পোস্টটি পড়ে কোন কিছু বুঝতে কোন ধরনের অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে নির্বিঘ্নে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url