এস্তোনিয়া যেতে কত টাকা লাগে | এস্তোনিয়া বেতন কেমন

এস্তোনিয়া হচ্ছে ইউরোপ মহাদেশের একটি দেশ। এস্তোনিয়াতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ কাজের জন্য আসেন। এস্তোনিয়াতে সময়ের সাথে সাথে কাজের চাহিদা যেন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এস্তোনিয়া থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়া খুবই সহজ।  

এস্তোনিয়া
এস্তোনিয়া
তাছাড়া এস্তোনিয়াতে কাজের অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে যার কারণে প্রবাসীদের জন্য এই দেশটি অনেক পছন্দের। আজকের পোস্টে এস্তোনিয়া ভিসা পাওয়ার উপায়, এস্তোনিয়া যেতে কত টাকা লাগে?

ও বাংলাদেশের এস্তোনিয়া দূতাবাস কোথায় এই নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করা হবে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাকঃ

এস্তোনিয়া ভিসা পাওয়ার উপায়?

এস্তোনিয়াতে কয়েক ধরনের ভিসা ব্যবহার করে খুব সহজেই যাওয়া যায়। বাংলাদেশ থেকে এস্তোনিয়া যেতে হলে এই ভিসাগুলোর মাধ্যমে যেতে পারেন। যেমনঃ
  • এস্তোনিয়া টুরিস্ট ভিসা
  • এস্তোনিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
  • এস্তোনিয়া স্টুডেন্ট ভিসা
এই ভিসা গুলো ব্যবহার করে ইউরোপের দেশ এস্তোনিয়াতে খুব সহজেই যাওয়া সম্ভব। তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক এস্তোনিয়ার এই তিন ধরনের ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিতঃ

এস্তোনিয়া টুরিস্ট ভিসা?

এস্তোনিয়াতে যারা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যেতে চান তারা এস্তোনিয়া টুরিস্ট ভিসা করতে পারেন। মাত্র ৮০ ইউরো ভিসা আবেদন ফি প্রদান করার মাধ্যমে এস্তোনিয়া টুরিস্ট ভিসা পাওয়া যাবে। এস্তোনিয়া টুরিস্ট ভিসা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সকল নথি প্রস্তুত করে এম্বাসির মাধ্যমে আবেদন করা যাবে। 

এস্তোনিয়া সেনজেন ভিসার মাধ্যমে ৩০ দিন থেকে সর্বোচ্চ ৯০ দিন পর্যন্ত ভ্রমণ করা যাবে। এস্তোনিয়াতে টুরিস্ট ভিসা নিয়ে যেতে হলে অবশ্যই ভ্রমণ করার ১৫ দিন আগে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। 

এস্তোনিয়া টুরিস্ট ভিসা দ্রুত পেতে হলে এস্তোনিয়া কনসুলেট এর মাধ্যমে আবেদন করা যেতে পারে। এস্তোনিয়া টুরিস্ট ভিসা প্রসেসিং হতে ১৫ থেকে ২০ দিনের মতো সময় লেগে থাকে।

এস্তোনিয়া স্টুডেন্ট ভিসা?

এস্তোনিয়াতে পড়াশোনার জন্য যেতে হলে অবশ্যই এস্তোনিয়া স্টুডেন্ট ভিসা নিতে হবে। এস্তোনিয়া স্টুডেন্ট ভিসা পেতে হলে এসএসসি এবং এইচএসসিতে মিনিমাম ৩ পয়েন্ট থাকা লাগবে। এস্তোনিয়াতে যারা স্টুডেন্ট ভিসায় পড়াশোনা করতে চান তারা চাইলে এস্তোনিয়া স্থানীয় ভাষা, ও ইংরেজি এই দুই ভাষার মাধ্যমে পড়াশোনা করতে পারবেন। 

এস্তোনিয়াতে যারা ইংরেজিতে পড়াশোনা করতে চান তাদের আইএলটিএস স্কোর অবশ্যই ৫ থাকা লাগবে। এস্তোনিয়া স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে স্কলারশিপের রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী আবেদন করা যাবে।

এস্তোনিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা?

বর্তমানে এস্তোনিয়া ওয়ার্ক পারমিট সিজনাল ভিসা চালু রয়েছে। অর্থাৎ যে কাজের উপর এস্তোনিয়াতে এখন প্রচুর চাহিদা রয়েছে সেই কাজের জন্য শুধুমাত্র লোক নেওয়া হচ্ছে।এস্তোনিয়াতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মাধ্যমে খুব সহজেই যাওয়া যাবে।

এস্তোনিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা? পেতে হলে এস্তোনিয়ার সরকারি চাকরির ওয়েবসাইট গুলোতে ঢুকতে হবে এবং সেখানে পছন্দ অনুযায়ী কাজের জন্য আবেদন করতে হবে। তারপরে সেখানে কাজের জন্য কি কি শর্তাদি দিচ্ছে সেগুলো অবশ্যই আপনাকে পালন করতে হবে। 

এস্তোনিয়াতে কিছু কাজের জন্য কোন ধরনের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয় না যেমন গবাদি পশু পালন, খেত খামারের কাজ, ফুল বাগানের কাজ ইত্যাদি। তবে এস্তোনিয়াতে কাজের জন্য অবশ্যই দক্ষ কর্মীদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে। 

তাই এস্তোনিয়াতে যদি কাজের ভিসা নিয়ে যেতে চান তাহলে অবশ্যই নির্দিষ্ট কাজ দেশ থেকেই শিখে যাবেন। যদি আপনার কাজের দক্ষতা খুবই ভালো হয় তাহলে এস্তোনিয়াতে বেতনের পরিমাণ অনেক বেশি হবে। নিচে এস্তোনিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার জন্য কি কি ডকুমেন্ট লাগে তা উল্লেখ করা হলঃ

এস্তোনিয়া ভিসা নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র?

অনেকের প্রশ্ন রয়েছে এস্তোনিয়া কাজের ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নেওয়ার জন্য কি কি ডকুমেন্ট লেগে থাকে। 

নিচে এস্তোনিয়া ভিসা পাওয়ার জন্য কি কি করা লাগবে তা তুলে ধরা হলোঃ
  • ছয় মাস মেয়াদি পাসপোর্ট প্রয়োজন হবে।
  • এনআইডি কার্ডের ফটোকপি লাগবে।
  • আবেদনকারী ব্যক্তির পাসপোর্ট সাইজের ৪ কপি ছবি লাগবে।
  • ইন্সুরেন্স পলিসি থাকতে হবে।
  • অন্য কোন দেশে ভ্রমণ করেছেন কিনা তার প্রমাণ পত্র লাগবে।
  • বিমান টিকিটের ফটোকপি লাগবে
এস্তোনিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে হলে এই ডকুমেন্টগুলো অবশ্যই থাকতে হবে। তাছাড়া অতিরিক্ত আরও যদি কিছু ডকুমেন্ট লাগে তাহলে কনস্যুলেটের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

এস্তোনিয়াতে কোন কাজের চাহিদা বেশি?

যারা এস্তোনিয়াতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে যাই তারা চাইলে কন্সট্রাকশন কোম্পানিগুলোতে গিয়ে কাজ করতে পারেন।বাংলাদেশ থেকে অনেক এজেন্সি রয়েছে যারা এস্তোনিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা দিয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানিগুলোতে কর্মী পাঠিয়ে থাকেন। 

তাছাড়া এস্তোনিয়াতে কনস্ট্রাকশন কাজের ভালো চাহিদাও রয়েছে। এস্তোনিয়াতে আরো ফল সংগ্রহের কাজ, বাসা বাড়ির কাজ, বাগান বাড়ির কাজ, খাবার তৈরির কাজ, গবাদি পশু পালন সহ আরো অনেক ধরনের কৃষি কাজের চাহিদা রয়েছে।

এইসব কাজে দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা খুব সহজেই এস্তোনিয়াতে গিয়ে ভালো কাজ পেয়ে যাবেন ও অনেক টাকা বেতন পাবেন। তাছাড়া কারো যদি কাজের বিষয়ে দক্ষতা না থাকে। 

তাহলে সময়ের সাথে সাথে দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেতনের পরিমাণও অনেক বেড়ে যাবে। তাই এই নিয়ে কখনোই চিন্তা করার কিছু নেই।

এস্তোনিয়াতে কাজের বেতন কত?

এস্তোনিয়াতে কাজের বেতন ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় অনেকটাই কম। এস্তোনিয়াতে যারা কনস্ট্রাকশনের কাজ করে থাকেন তারা মাসে ৫০০ থেকে ৬০০ ইউরো আয় করে থাকেন। এস্তোনিয়াতে যারা বাসা বাড়ি সহ অন্যান্য কৃষি কাজ করে থাকেন। 

তারা প্রতি মাসে ৪০০ থেকে ৫০০ ইউরো বেতন পান। এস্তোনিয়াতে যারা আইটি সেক্টরে কাজ করে থাকেন তাদের বেতন অনেক বেশি হয়ে থাকে। অর্থাৎ যারা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার ও প্রোগ্রামার তারা মাসে ১০০০ থেকে ১৫০০ ইউরো পর্যন্ত বেতন পান। 

অর্থাৎ যাদের শিক্ষকতা যোগ্যতা ভালো রয়েছে এবং কোন কাজের বিষয়ে ভালো দক্ষতা রয়েছে তারাই এস্তোনিয়াতে গিয়ে অনেক বেশি টাকা আয় করতে পারবেন। তবে যারা এস্তোনিয়াতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় গিয়ে নিম্নমানের কাজ পেয়েছেন তারা চাইলে এস্তোনিয়া থেকে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতে যেতে পারেন। 

ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতে গিয়ে যদি ভালো কোন কাজ পান তাহলে সেখানে অনেক বেশি টাকা বেতন পাবেন।

এস্তোনিয়া যেতে কত টাকা লাগে | এস্তোনিয়া ভিসা খরচ কত

এস্তোনিয়াতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যেতে হলে এম্বাসি অথবা কনস্যুলেটের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃত অনেক এজেন্সি রয়েছে তাদের মাধ্যমে এস্তোনিয়া  ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। 

এস্তোনিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার মত খরচ হয়ে থাকে। তবে কেউ যদি দালালের মাধ্যমে এস্তোনিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রসেসিং করে থাকেন তাহলে তার খরচের পরিমাণ ৭ থেকে ১০ লক্ষ টাকার মত হতে পারে। 

তাছাড়া দালালের মাধ্যমে এস্তোনিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা করার অনেক ঝুঁকি রয়েছে। বর্তমানে এস্তোনিয়া ভিসা ফ্রি হিসাবে ১২০ ইউরোর মত নেওয়া হচ্ছে।

এস্তোনিয়া থেকে ইউরোপের অন্যান্য দেশে যাওয়ার উপায়?

যারা ইউরোপের উন্নত দেশগুলোতে যেতে চান তাদের মধ্যে অনেকেই এস্তোনিয়াতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যান। এই সকল কর্মীগণ এস্তোনিয়াকে ইউরোপের অন্যান্য দেশে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করে থাকেন। 

এস্তোনিয়াতে দুই থেকে এক বছর কাজ করার পরে সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স,  ইতালি ও জার্মানি সহ এই সকল দেশগুলোতে খুব সহজে যাওয়া যায়। অনেকে এস্তোনিয়া থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই খুবই ভালো বেতন পাচ্ছেন।

এস্তোনিয়া কি সেনজেন দেশ?

এস্তোনিয়া ইউরোপের দেশ আমরা অনেকেই জানলেও সেনজেনভুক্ত দেশ কিনা এই বিষয়ে অনেকের জানা নেই। বর্তমানে সর্বশেষ সেনজেনভুক্ত দেশের তালিকায় এস্তোনিয়ার নাম রয়েছে। তাই অবশ্যই এস্তোনিয়া একটি সেনজেনভুক্ত দেশ। এস্তোনিয়া ভ্রমণ করার জন্য সেনজেন ভিসা থাকলেই চলবে।

বাংলাদেশে এস্তোনিয়া দূতাবাস?

বাংলাদেশে এস্তোনিয়া কনসুলেট অফিস রয়েছে। তবে অনেকেই এই বিষয়ে জানেন না। যারা বাংলাদেশ থেকে এস্তোনিয়া ভিসা নিতে চান তারা চাইলে সরাসরি এই কনস্যুলেটের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন। বাংলাদেশে এস্তোনিয়া দূতাবাসের ঠিকানা হলো 9th Floor, Safura Tower, 20 Kemal Ataturk Ave, Dhaka 1213।

শেষ কথা, আশা করি আজকের পোস্টটি যারা বিস্তারিত ও মনোযোগ সহকারে পড়েছেন তারা এস্তোনিয়া ভিসা পাওয়ার উপায় ও এস্তোনিয়া যেতে কত টাকা লাগে এই বিষয়ে মোটামুটি ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। 

তারপরেও যদি এই নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থাকে বা পোস্টটি পড়ে কোন কিছু সম্পর্কে বুঝতে কোন ধরনের অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url