ফিনল্যান্ড যাওয়ার সহজ উপায় | ফিনল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে
ফিনল্যান্ড ইউরোপের একটি ধনী দেশ। বর্তমান সময়ে ফিনল্যান্ডে বিভিন্ন কাজের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যার ফলে ফিনল্যান্ডে কাজ করার জন্য অনেক কর্মী প্রয়োজন হচ্ছে। তাছাড়া ফিনল্যান্ডে অনেকে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ও পড়াশোনার জন্য যাচ্ছে।
ফিনল্যান্ড ভিসা |
ফিনল্যান্ড যাওয়ার নিয়ম?
বাংলাদেশ থেকে তিন ধরনের ভিসা ব্যবহার করে খুব সহজেই ফিনল্যান্ড যাওয়া যায়। যেমনঃ
- ফিনল্যান্ড টুরিস্ট ভিসা
- ফিনল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা
- ফিনল্যান্ড কাজের ভিসা
ফিনল্যান্ড টুরিস্ট ভিসা
ফিনল্যান্ড টুরিস্ট ভিসা ব্যবহার করে ফিনল্যান্ডে ৩০ দিন থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত ভ্রমণ করা যাবে। যেহেতু ফিনল্যান্ড সেনজেনভুক্ত একটি দেশ তাই ফিনল্যান্ডের যেতে হলে সেনজেন ভিসা নিলেও চলে।
ফিনল্যান্ড টুরিস্ট ভিসায় যেতে হলে ভিসা আবেদন ফরম পূরণ করে, এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, পাসপোর্ট এর ফটোকপি, ভ্রমণ বীমা, সমর্থনকারী কাগজপত্র, ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য পিতা-মাতার সম্পত্তি অনেক প্রয়োজন।
সরাসরি ফিনল্যান্ড দূতাবাসের মাধ্যমে ফিনল্যান্ড সেনজেন ভিসা বা টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে।
ফিনল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা
বাংলাদেশ থেকে অনেকেই ফিনল্যান্ডে পড়াশোনা করার জন্য যেয়ে থাকেন।ফিনল্যান্ডে পড়াশোনা করতে যেতে হলে সর্বপ্রথম ফিনল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। ফিনল্যান্ডে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে ৩৬০ ইউরো থেকে ৪০০ ইউরোর মত আবেদন ফি জমা দিতে হয়।অনলাইনে অথবা ব্যাংকের মাধ্যমে এই ফি দেওয়া যাবে।
ফিনল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসার ফি দেওয়ার আগে প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র লাগবে যেমনঃ
- কমপক্ষে দুই বছর মেয়াদী একটি বৈধ পাসপোর্ট।
- পাসপোর্ট সাইজের সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড ছবি লাগবে ১০ কপি।
- ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি লাগবে।
- পিতা-মাতার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি লাগবে।
- এইচএসসি সার্টিফিকেট এর ফটোকপি লাগবে।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফার্মেশন লেটার লাগবে।
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট লাগবে ও করোনার সার্টিফিকেট এর ফটোকপি লাগবে।
তাছাড়া ফিনল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা করার জন্য আরো কিছু খরচ রয়েছে তা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
ফিনল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা খরচ?
ফিনল্যান্ডে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে যেতে হলে মোট খরচ আসতে পারে চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। বর্তমানে যদি কেউ ফিনল্যান্ডে স্টুডেন্ট ভিসায় পড়াশোনা জন্য আসতে চান তাহলে তার সর্বনিম্ন এই খরচটা আসবে।
ফিনল্যান্ডে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে যেতে হলে ভিসা এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তাছাড়া আপনার পরিচিত কেউ যদি ফিনল্যান্ডে থেকে থাকে তাহলে তার মাধ্যমে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করে নিতে পারবেন।
ফিনল্যান্ড কাজের ভিসা
ফিনল্যান্ড যেমন অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী একটি দেশ তেমনি শান্তিপ্রিয় একটি দেশ। ফিনল্যান্ডে যদি ভালো কোন কাজে নিয়োজিত হতে পারেন তাহলে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করার সুযোগ রয়েছে। ফিনল্যান্ডে কর্মীরা সপ্তাহে ২৮ ঘণ্টা কাজ করে থাকেন।তাছাড়া কোম্পানি ভিসায় ফিনল্যান্ডে যারা কাজ করে থাকেন তাদের অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকেন।
যেহেতু ফিনল্যান্ড সেনজেনভুক্ত একটি দেশ তাই এখানে কাজ করার সুবাদে আপনি ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতেও যেতে পারবেন। ফিনল্যান্ড কাজের ভিসা পেতে হলে কিছু শর্তাদি রয়েছে।
ফিনল্যান্ড কাজের ভিসা পেতে হলে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট?
ফিনল্যান্ডে কাজের ভিসা পেতে হলে প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র থাকতে হবে। প্রথম কথা হচ্ছে আপনি যে কাজের উপর আবেদন করছেন সে কাজের বিষয়ে অবশ্যই আপনার দক্ষ হতে হবে। তাছাড়া ইংলিশ লার্নিং এর সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।
তাছাড়া ফিনল্যান্ড কাজের ভিসা পেতে হলে আর কি কি শর্তাদি রয়েছে ও কি কি ডকুমেন্ট লাগবে তা নিচে দেওয়া হলোঃ
- ছয় মাস মেয়াদী একটি ভ্যালিড পাসপোর্ট লাগবে।
- এন আই ডি কাডের ফটোকপি লাগবে।
- চেয়ারম্যান কর্তৃক সত্যায়িত সনদ প্রয়োজন হবে।
- চার কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে।
- নিবন্ধন আইডি কার্ডের ফটোকপি ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট লাগবে।
- ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট লাগবে ও নির্দিষ্ট কাজের ওপর দক্ষতা লাগবে।
- অন্য কোথাও কাজে নিয়োজিত থাকলে তার প্রমাণ পত্র লাগবে।
এই কাগজপত্র গুলি ফিনল্যান্ড কাজের ভিসা করার জন্য প্রয়োজন হবে। যদি কোন ধরনের ভুলক্রুটি থেকে থাকে এই কাগজগুলোতে তাহলে ফিনল্যান্ড ভিসা প্রসেসিং বাতিল হতে পারে।
ফিনল্যান্ড কাজের ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া?
ফিনল্যান্ড কাজের ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া অবশ্যই জানতে হবে।কেননা অনেকেই ফিনল্যান্ড কাজের ভিসার জন্য কিভাবে আবেদন করতে হয় এই বিষয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে থাকেন।ফিনল্যান্ড কাজের ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া সরাসরি দূতাবাসের মাধ্যমে করা যাবে।
যারা বাংলাদেশ থেকে ফিনল্যান্ডের কাদের ভিসা নিতে চান তারা সরাসরি দিল্লিতে অবস্থিত ফিনল্যান্ড দিল্লি এম্বাসি থেকে করে নিতে পারবেন। বাংলাদেশে অনেক সরকারি ও বেসরকারি এজেন্সি রয়েছে যারা দিল্লি দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করার মাধ্যমে ভিসা পাইয়ে দিয়ে থাকে।
যারা ফিনল্যান্ডে কাজের ভিসার জন্য আবেদন করে থাকেন তারা তারা নির্দিষ্ট একটি কাজের উপর আবেদন করার পরে সেই কাজে নির্বাচিত হয়ে তারপরে সে নিজেই দূতাবাসে গিয়ে ইনভাইটেশন লেটার সংগ্রহ করে ভিসার জন্য আবেদন করে থাকেন।
ফিনল্যান্ডে কাজ পাওয়ার উপায়?
বর্তমানে ফিনল্যান্ডে কাজ পাওয়া আগে তুলনায় অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। ফিনল্যান্ডে যদি আপনার পরিচিত কোন কোম্পানি থেকে থাকে বা কোন আত্মীয় থেকে থাকে তাহলে তাদের মাধ্যমে ফিনল্যান্ড কাজের ভিসা নিতে পারেন।
আর যদি না পারেন তাহলে সরাসরি ফিনল্যান্ডের জব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কাজের উপর আবেদন করতে পারেন যদি আপনার আবেদনটি গৃহীত হয়ে থাকে তাহলে এজেন্সির মাধ্যমে ফিনল্যান্ড ভিসা করে নিতে পারবেন।
যেহেতু এই সকল এজেন্সি গুলো সরাসরি ফিনল্যান্ডের কোম্পানির গুলোর সাথে যোগাযোগ করে ভিসা দিয়ে থাকে তাই এক্ষেত্রে খরচের পরিমাণ অনেক বেশি হতে পারে। কিন্তু ফিনল্যান্ডে গিয়ে যদি সঠিকভাবে কাজ করতে পারেন তাহলে অল্প সময়ের মধ্যেই এই টাকা উঠে আসবে।
ফিনল্যান্ড এজেন্সি কোথায়?
ফিনল্যান্ড যাওয়ার জন্য সব থেকে বিশ্বস্ত উপায় হচ্ছে এজেন্সির মাধ্যমে যাওয়া। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশ ফিনল্যান্ডের কোন এজেন্সি নাই। বর্তমানে বাংলাদেশের যাবতীয় কাজগুলো দিল্লি ফিনল্যান্ড দূতাবাসের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। তবে অনেকেই আছেন যারা সরাসরি ফিনল্যান্ড দূতাবাসে চলে গিয়ে কাজের ভিসার জন্য আবেদন করে থাকেন।
ফিনল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে?
ফিনল্যান্ডে কাজের ভিসা নিয়ে যেতে হলে অনেক টাকা খরচ হয়ে থাকে। ফিনল্যান্ডে ভালো কাজের ভিসা পেতে হলে ১২ থেকে ১৪ লক্ষ টাকার মতো খরচ আসতে পারে।
আর যদি ফিনল্যান্ডে স্টুডেন্ট ভিসার মাধ্যমে যেতে চান তাহলে খরচ আসতে পারে তার থেকে ৫ লক্ষ টাকার মত।
ফিনল্যান্ড এক টাকা বাংলাদেশের কত টাকা?
ফিনল্যান্ডে মুদ্রা কে ইউরো বলা হয়ে থাকে। অনেকেই ফিনল্যান্ডের মুদ্রার মান ও বাংলাদেশের মুদ্রার মান কেমন এই বিষয়ে প্রশ্ন করে থাকেন। বর্তমানে ফিনল্যান্ডের ১ ইউরো সমান বাংলাদেশি ১২২ টাকার কাছাকাছি।ফিনল্যান্ডের ১০০ ইউরো সমান বাংলাদেশের ১২,২৩০ টাকার কাছাকাছি।
শেষ কথা, আশা করি আজকের পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে ফিনল্যান্ড যাওয়ার নিয়ম ও ফিনল্যান্ড ভিসা কিভাবে করতে হয় এ বিষয়ে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন।
তারপরেও যদি এই নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে বা পোস্টটি পড়ে কোন বিষয় সম্পর্কে বুঝতে কোন ধরনের অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।
বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url