জাপানে সর্বনিম্ন বেতন কত | জাপান যেতে কত টাকা লাগে

জাপান এশিয়ার একটি উন্নত দেশ। বর্তমানে জাপানে লোক নেওয়া হচ্ছে যার কারণে অনেকেই সরকারি ভাবে জাপান যাওয়ার উপায় খুঁজছেন। সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার জন্য কি কি যোগ্যতা লাগে ও জাপানের ভিসা কিভাবে পাওয়া যাবে এই নিয়েই থাকছে আজকের পোস্টটি।
জাপান ভিসা
জাপান ভিসা
জাপান যেতে আগে অনেক ঝামেলার সম্মুখীন হতে হলেও এখন খুব সহজেই সরকারিভাবে জাপান যাওয়া যাচ্ছে। এসএসসি পাস করার পর যে কোন ব্যক্তি ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে চাইলে খুব সহজেই জাপান যেতে পারবেন। তবে জাপান যাওয়ার জন্য কিছু শর্তাদি রয়েছে অবশ্যই এই শর্তাদিগুলো অবলম্বন করে যেতে হবে।

সরকারিভাবে জাপান কেন যাবেন?

সরকারিভাবে জাপান গেলে তেমন কোনো টাকা পয়সা খরচ হয় না এবং বিমান ভাড়া থেকে শুরু করে যাবতীয় সকল খরচ সরকার বহন করে থাকে। তাছাড়া সেখানে ভালো কাজের পাশাপাশি থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা সহ পাঁচ বছর কাজ করার সুবিধা ও দেশে আসলে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়ে থাকে। 

পরবর্তীতে চাইলে জাপানের কোম্পানিতেগুলোতে আপনি নিজ যোগ্যতায় কাজের জন্য যেতে পারবেন। সরকারিভাবে জাপান যেতে পারলে কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না অর্থাৎ আপনি কোন ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই সেখানে গিয়ে কাজ করতে পারবেন। প্রশিক্ষণ খরচ থেকে শুরু করে যাবতীয় সকল ধরনের খরচ এক্ষেত্রে কোম্পানি বহন করবে। 

বাংলাদেশ থেকে শুধুমাত্র আপনাকে জাপানে গিয়ে কি করবেন, কোন কাজ আপনাকে দিয়ে করানো হবে এই সকল বিষয়গুলোর উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার উপায়?

সরকারিভাবে জাপান যেতে হলে আপনাদেরকে সর্বপ্রথম টিটিসি কেন্দ্রগুলো থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারপর যেতে হবে। এক্ষেত্রে কেউ যদি টিটিসি কেন্দ্রের মাধ্যমে ছয় মাস ট্রেনিং সম্পূর্ণ করতে পারেন তাহলে পরবর্তীতে আইএম জাপান পরীক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে  খুব সহজেই জাপান যেতে পারবেন।

এক্ষেত্রে ছেলেদের অবশ্যই শারীরিক যোগ্যতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি হতে হবে ও মেয়েদের জন্য ৪ ফুট ১১ ইঞ্চি হতে হবে। তবে এক্ষেত্রে জেনে রাখা উচিত যে ৬ মাস ট্রেনিং এর মধ্যেই আপনাকে জাপান যাওয়ার জন্য ভাষা শিখে ফেলতে হবে। টিটিসির মাধ্যমে ভাষা শিখে পরবর্তীতে জাপান যাওয়ার জন্য অ্যাটেন্ড করতে হবে। 

২০২৩ সালে জাপানে যাওয়ার জন্য যে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সেখানে অবশ্যই দক্ষ কর্মীদের উপর বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। তাই অবশ্যই সঠিক প্রশিক্ষণ নিয়ে তারপর জাপান যাওয়ার জন্য চেষ্টা করবেন তাহলে ভালো হবে।

সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার যোগ্যতা?

জাপানে যাওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা অবশ্যই এসএসসি পাশ হওয়া লাগবে। তাছাড়া জাপানি ভাষা ns এবং n4 পাশ থাকতে হবে।শারীরিক যোগ্যতা পাসপোর্ট ৪ ইঞ্চি হতে হবে এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে শারীরিক যোগ্যতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি হতে হবে। তাছাড়া এই ক্ষেত্রে ছেলেদের ৩৫ বার পর্যন্ত বুকডন দেওয়ার সক্ষমতা থাকতে হবে ও ২৫ টা সিটআপ দেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। 

তাছাড়া শারীরিক ওজন ৫৫ থেকে ৬৫ কেজির মধ্যে হতে হবে। তাছাড়া ৬৫ কেজি পর্যন্ত যে কোন জিনিস তোলার ক্ষমতা থাকতে হবে।ভর্তি পরীক্ষার জন্য কাগজপত্র যাচাই-বাছাই ও শারীরিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যাচাই-বাছাই করার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। এখানে পুশ আপ ও সিট আপ করানোসহ দৌড়ানো ও সাঁতার কাটানোর মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া হয়ে থাকে।

জাপান যেতে কত টাকা লাগে?

সরকারিভাবে জাপান যেতে খরচ কত বা সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার জন্য কোথায় কত টাকা খরচ করতে হয় এই বিষয়ে অনেকেই জানেন না। সরকারিভাবে জাপান যেতে হলে প্রথম অবস্থায় আপনাদেরকে নির্বাচিত হতে হবে। 

বাংলাদেশে অনেক টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে এখান থেকে সর্বপ্রথম একটি আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হবে। আবেদন ফরমটি সংগ্রহ করার জন্য আপনাদের ১০০০ টাকার মতো খরচ হতে পারে। আবেদন ফরমটি সংগ্রহ করার পর আপনাকে আরেকটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। 

পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগ পর্যন্ত আপনার খরচ করতে হবে তারপরে যদি নির্বাচিত হয়ে যান তাহলে আর কোন খরচ করা লাগবে না। পরীক্ষায় নির্বাচিত হওয়ার পর অন্যান্য যে সকল প্রশিক্ষণ গুলো রয়েছে সেগুলোর জন্যও খরচ সরকার বহন করবে।

সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র?

সরকারিভাবে জাপান যেতে হলে অবশ্যই কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট বা কাগজপত্র লাগবে। নিচে সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার জন্য কি কি ডকুমেন্ট লাগে তা উল্লেখ করা হলোঃ
  • দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি লাগবে।
  • এইচএসসি বা সমমান পাশের সনদ পত্রের ফটোকপি লাগবে।
  • জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি প্রয়োজন হবে।
  • নিবন্ধন আইডি কার্ডের ফটোকপি লাগবে।
  • বাবা-মায়ের এনআইডি কার্ডের ফটোকপি লাগবে ও পাসপোর্ট এর ফটোকপি প্রয়োজন হবে।
উপরে যে কাগজপত্র গুলোর কথা বলা হয়েছে অবশ্যই এগুলো লাগবে। তবে এগুলোতে যদি কোন ধরনের ভুল থেকে থাকে তাহলে সেগুলো অবশ্যই সংশোধন করে নিতে হবে।

সরকারিভাবে  জাপান যাওয়ার এজেন্সি?

সরকার নিবন্ধিত বিভিন্ন এজেন্সি গুলোর মাধ্যমে খুব সহজেই জাপান যাওয়া যাবে। এই সকল এজেন্সি গুলো কিছু শর্তাদি পালন করে খুব সহজেই জাপান নিয়ে যাবে। সব থেকে ভালো হয় বাংলাদেশ থেকে সরকার নিবন্ধিত যে সকল এজেন্সি গুলো রয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে যাওয়া। 

যারা ওয়ার্ক পারমিট  ভিসায় জাপান যেতে চান কিন্তু বয়স সীমা পার হয়ে গিয়েছে তারা চাইলে এ সকল এজেন্সি গুলোর সাহায্যে যেতে পারেন।

সরকারিভাবে জাপান গেলে কি ধরনের কাজ পাওয়া যায়?

সরকারিভাবে জাপান যেতে হলে আপনাদেরকে কর্মী হিসেবে যেতে হবে। সরকারিভাবে জাপান গিয়ে কৃষিকাজ ও ড্রাইভিং সহ ইলেকট্রনিক বিভিন্ন কাজ করতে পারবেন। যারা সরকারিভাবে যায় তাদের বেতনসীমা অনেকটা একই ধরনের হয়ে থাকে। 

সরকারিভাবে জাপান যেতে হলে প্রথম অবস্থায় আপনাকে শারীরিকভাবে ফিট ও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে তারপর প্রশিক্ষণ নিয়ে জাপান যাওয়া যাবে।

জাপানে বেতন কত?

জাপানে কাজের বেতনের পরিমাণ অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় কিছুটা বেশি। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে জাপান কে সব থেকে বড় কাজের বাজার হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। তবে জাপানে শুধুমাত্র অভিজ্ঞ কর্মীদের কাজের জন্য নেয়া হয়ে থাকে। 

জাপানে কাজ করার অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি কোম্পানি থেকে যাতায়াতের খরচ বহন করা হয়ে থাকে। জাপানে একজন কর্মীর সর্বোচ্চ বেতন হলো ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। জাপানের যারা আইটি সেক্টরে কাজ করে থাকে তাদের বেতন এদের তুলনায় দ্বিগুণ। 

জাপানের যারা ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে ও আইটি সেক্টরে কাজ করে থাকেন তারাই সর্বোচ্চ বেতন পেয়ে থাকেন। তাছাড়া কেউ যদি নির্দিষ্ট কাজের ওপর খুবই বেশি অভিজ্ঞ হয়ে থাকেন তাহলে যে কোন কোম্পানিতে তার অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র দিয়ে কাজ নিতে পারবেন।

জাপানে সর্বনিম্ন বেতন কত?

জাপানে একজন কর্মী  সর্বনিম্ন এক লাখ টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকেন। যাদের কাজের অভিজ্ঞতা খুবই কম এবং নিম্নমানের শ্রমিক রয়েছেন তাদের সাধারণত এই বেতনটা প্রদান করা হয়ে থাকে।

জাপানে শ্রমিকরা নিম্নমানের যে সকল কাজগুলো করে থাকেন তাদের মধ্যে ১ লাখ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বেতন আসতে পারে। তবে এখানেও শুধুমাত্র যাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদেরকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে।

জাপানে বেসিক বেতন কত?

বেসিক বেতন সাধারণত সকল ধরনের কাজ নিয়ে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। তবে জাপানে এখন আইটি সেক্টর ও ইঞ্জিনিয়ারিং জব গুলোতে বেতন অনেকটাই বেশি হয়ে থাকে। জাপানে একজন বিদেশী শ্রমিকের বেতন ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার মতো।

ফ্যাক্টরি ওয়ার্কার, ফুড প্যাকেজিং, রেস্টুরেন্ট ও হোটেল সহ অন্যান্য যে সকল নিম্নমানের কাজগুলো রয়েছে এগুলোতে শ্রমিকরা এই বেতন পেয়ে থাকেন। তবে তাদের অভিজ্ঞতা বাড়ার পাশাপাশি এক্ষেত্রে বেতনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। 

তাছাড়া এই সকল কোম্পানিগুলো থেকে যাতায়াতের খরচসহ বছর শেষে বোনাস প্রদান করা হয়ে থাকে।

সরকারিভাবে জাপানের বেতন কত?

যারা বাংলাদেশ থেকে সরকারি ভাবে ট্রেনিং নিয়ে জাপানে গিয়েছেন তাদের বেতন সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ দুই লক্ষ বিশ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। যারা সরকারি মাধ্যমে বুয়েসেল কর্তৃক প্রশিক্ষণ নিয়ে গিয়েছেন তারা শুধুমাত্র এই সুবিধা পাবেন।

তাছাড়া সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার জন্য আপনাকে বাড়তি কোন খরচ দিতে হয় না এবং আপনি পাঁচ বছর পর জাপানে কাজ শেষ করে এসে একবারে ৫ লক্ষ টাকা পাবেন। এই টাকাটা যারা সরকারিভাবে জাপানে গিয়ে কাজ করেছে তারা এক্সট্রা ভাবে পেয়ে থাকবে।

জাপানে কোন কাজগুলোতে বেতন বেশি দিয়ে থাকে?

জাপানে কিছু কাজ রয়েছে যে কাজগুলোতে অনেক বেশি টাকা বেতন দেওয়া হয়ে থাকে। নিচে জাপানে সর্বোচ্চ বেতন দেয়া কাজগুলোর তালিকা উল্লেখ করা হলোঃ
  • সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বেতন ২ লক্ষ টাকা
  • নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার বেতন ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা
  • রেস্টুরেন্ট কর্মী বেতন ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা
  • কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বেতন ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা
  • টাইলস মিস্ত্রি বেতন ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা
  • ইলেকট্রিশিয়ান বেতন ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা
  • কম্পিউটার অপারেটর বেতন ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা
  • মেকানিক্যাল বেতন ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা
  • কৃষি কাজের বেতন ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা
জাপানের যারা কাজ করতে ইচ্ছুক তারা চাইলে এই কাজগুলোর বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারপরে জাপানে যেতে পারেন। কেননা জাপানে এই কাজগুলোর উপরে সবথেকে বেশি বেতন দেওয়া হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ থেকে জাপানের দূরত্ব?

বাংলাদেশ থেকে জাপানের দূরত্ব কত বা বাংলাদেশ থেকে জাপানের দূরত্ব মোট কত কিলোমিটার অনেকেরই প্রশ্ন রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে জাপানের দূরত্ব ৪ হাজার ৭৬৬ কিলোমিটার। 

অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে যদি আপনাকে জাপানে যেতে হয় তাহলে ৪ হাজার ৭০০ কিলোমিটার এর উপরে পথ পাড়ি দিয়ে তারপর জাপান যেতে হবে।

জাপানের মুদ্রার নাম কি?

অনেকে জাপানের মুদ্রার নাম কি বা জাপানের মুদ্রা কে কি বলা হয়ে থাকে এই বিষয়ে জানেন না। জাপানের মুদ্রা কে সাধারণত ইয়েন বলা হয়ে থাকে।জাপানের এক টাকা সমান বাংলাদেশি ০.৭৬ টাকার পাশাপাশি।জাপানের ১০০ ইয়েন সমান বাংলাদেশি ৭৬.৪৩ টাকার কাছাকাছি।

শেষ কথা, আশা করি আজকের পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার উপায় বা জাপান ভিসা কিভাবে পাওয়া যায় ও জাপান যেতে কত টাকা লাগে এই বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। 

তারপরেও যদি এই নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে বা পোস্টটি পড়ে কোন বিষয় সম্পর্কে বুঝতে কোন ধরনের অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url