ফ্রান্স ভিসা ফ্রম বাংলাদেশ - ফ্রান্স যেতে কত টাকা লাগবে

অনেক প্রবাসীদের কাছে ফ্রান্স হচ্ছে স্বপ্নের একটি দেশ। কেননা ফ্রান্স দেশটিতে রয়েছে উন্নত জীবনধারণের সুবিধা ও প্রবাসীদের উচ্চ বেতন। ফ্রান্সের বিভিন্ন ধরনের ভিসা নিয়ে যাওয়া যায়। তবে ফ্রান্সে যাওয়ার জন্য কিছু শর্তাদি রয়েছে যেগুলো অনেকেই জানেন না। অনেকেই ফ্রান্সে যেতে চান কিন্তু ফ্রান্সে যাওয়ার জন্য কি কি করতে হয় তার সঠিক গাইডলাইন পান না। 
ফ্রান্স
ফ্রান্স
আজকের পোস্টে ফ্রান্স ভিসা পাওয়ার উপায়, ফ্রান্সে কাজের বেতন কত, ফ্রান্সে কোন কাজের চাহিদা বেশি ও ফ্রান্স যেতে কত টাকা লাগে? এই নিয়ে মূল্যবান কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাকঃ

ফ্রান্স ভিসা পাওয়ার উপায়?

ফ্রান্স যেহেতু ইউরোপের উন্নত একটি দেশ তাই অনেকেই ফ্রান্সে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করে থাকেন। বাংলাদেশ থেকে যারা ফ্রান্সে যেতে চান তারা ফ্রান্স ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসা ও ফ্রান্সের বিজনেস ভিসা নিয়ে যেতে পারেন। 

তাছাড়া ফ্রান্সে অনেক দেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে প্রচুর সংখ্যক লোক এসে থাকেন।এশিয়ার দেশগুলো থেকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ও স্টুডেন্ট ভিসার মাধ্যমে ফ্রান্সের অনেক লোক কাজের জন্য যায়।

ফ্রান্স স্টুডেন্ট ভিসা?

উচ্চশিক্ষার জন্য অনেকেই ফ্রান্স স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন করে থাকেন। স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ব্যাচেলারস,মাস্টার্স, পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা, পিএইচডি সহ হায়ার স্টাডি করা যায়। তাছাড়া ফ্রান্সে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে পড়ার অনেক সুযোগ-সুবিধা থাকার কারণে অনেক দেশের ছাত্র-ছাত্রীগণ সেখানে পড়াশোনা করেন। 

ফ্রান্সে স্টুডেন্ট ভিসায় পড়াশোনা করতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ফ্রান্সের ভাষা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। তারপরে যে ভাষাটির উপর কোর্স করতে চান সেই ভাষাটি আস্তে আস্তে আয়ত্ত করতে হবে। তাছাড়া ফ্রান্সের স্টুডেন্ট ভিসার জন্য পড়াশুনা করতে হলে অবশ্যই ইংরেজিতে ভালো দক্ষতা থাকা লাগবে এবং আইএলটিটিএস স্কোর ৬ থাকা লাগবে। 

ফ্রান্সে বর্তমানে ৪ ধরনের স্টুডেন্ট ভিসা চালু রয়েছে এগুলোর মধ্যে থেকে যেকোনো একটি নিয়ে খুব সহজেই ফ্রান্সে যাওয়া যাবে।

ফ্রান্স টুরিস্ট ভিসা?

ফ্রান্স যেহেতু সেনজেনভুক্ত একটি দেশ তাই ফ্রান্সে যাওয়ার জন্য টুরিস্ট ভিসা নিলে ফ্রান্স সহ আরো অনেক সেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ করা যাবে।ফ্রান্সে টুরিস্ট ভিসা সাধারণত ৩০ দিন থেকে সর্বোচ্চ ৯০ দিন পর্যন্ত মেয়াদকালীন হয়ে থাকে। 

অর্থাৎ কেউ যদি ফ্রান্সের টুরিস্ট ভিসা করে থাকেন তাহলে সে ফ্রান্স সহ অন্যান্য সেনজেন দেশগুলোতে ভ্রমণ করতে পারবে এবং সর্বোচ্চ সেখানে ৯০ দিন অবস্থান করতে পারবে। ফ্রান্স দূতাবাসের মাধ্যমে খুব সহজেই টুরিস্ট ভিসা সংগ্রহ করা যাবে।

ফ্রান্স বিজনেস ভিসা?

ফ্রান্সে যারা ব্যবসার উদ্দেশ্যে যান বা বিনিয়োগকারী রয়েছেন তাদের জন্য ফ্রান্স বিজনেস ভিসা দেওয়া হয়ে থাকে। ফ্রান্সে বিজনেস ভিসা নিয়ে যাওয়ার অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। যারা ফ্রান্সের বিজনেস ভিসা নিতে চান তারা চাইলে সরাসরি ফ্রান্স কনসুলেট বা দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করে ভিসাটি যোগ্যতা অনুযায়ী নিতে পারবেন।

ফ্রান্স ওয়ার্ক পারমিট ভিসা | ফ্রান্স কাজের ভিসা

ফ্রান্সে যারা কাজের উদ্দেশ্যে যেতে চায় তাদেরকে ফ্রান্স ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বা কাজের ভিসার মাধ্যমে যেতে হয়। যখন ফ্রান্সের ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মাধ্যমে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে তখন কর্মীগন চাইলে কাজের ভিসা নিয়ে যেতে পারবেন। 

ফ্রান্সের কাজের ভিসা নিয়ে যেতে হলে প্রথমে আপনাদেরকে বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তাছাড়া আপনার আত্মীয় বা পরিচিত কেউ যদি ফ্রান্সে থেকে থাকেন তাহলে তাদের মাধ্যমেও ভিসা নিতে পারেন। 

তবে অনেকেই বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃত অনেক এজেন্সি রয়েছে তাদের মাধ্যমে ফ্রান্স যাওয়ার জন্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসা করে থাকেন। ফ্রান্সে শুধুমাত্র দক্ষ জনশক্তি নেওয়া হয়ে থাকে কাজের জন্য তাই ভিসা আবেদনের আগে অবশ্যই এই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।

তাছাড়া যারা কাজের পাশাপাশি ইংরেজি ভাষার ওপর বেশি দক্ষ হবে তারা সেখানে অনেক বেশি অগ্রাধিকার পাবে। কেননা ইংরেজি ভাষাতে ভালো দক্ষ হলে সে আজ সম্পর্কে অনেক ভালো বুঝবে এবং তার বেতনের পরিমাণ অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি হবে।

ফ্রান্স যেতে কি কি ডকুমেন্ট লাগে?

ফ্রান্স যেতে অবশ্যই প্রয়োজনে কিছু কাগজপত্র লাগবে। এই সকল ডকুমেন্ট ব্যতীত কোনভাবেই ফ্রান্সের ভিসা পাবেন না। নিচে ফ্রান্স যেতে কি কি ডকুমেন্ট লাগে তা উল্লেখ করা হলঃ
  • এক বছর মেয়াদী সম্পূর্ণ একটি বৈধ পাসপোর্ট লাগবে।
  • চার কপি পাসপোর্ট সাইজের ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা ছবি লাগবে।
  • আবেদন কারী ব্যক্তির ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি লাগবে।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রয়োজন হবে।
  • করোনাভাইরাসের টিকা কার্ড এর ফটোকপি লাগবে।
এই সকল ডকুমেন্ট ব্যতীত কোনভাবেই ফ্রান্সের ভিসা পাবেন না। এই ডকুমেন্টগুলোর মধ্যে যদি কোন ডকুমেন্ট ভুল দিয়ে থাকেন তাহলে আপনার ভিসা আবেদনটি বাতিল হতে পারে।

ফ্রান্স যেতে কত টাকা লাগে | ফ্রান্স ভিসা খরচ কত

ফ্রান্স যাওয়ার আগে অবশ্যই ফ্রান্সে যাওয়ার জন্য ভিসা খরচ কত হবে এই বিষয়টা সম্পর্কে সর্বপ্রথম জেনে নিতে হবে। ফ্রান্সে যদি কেউ স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে যেতে চান তাহলে তার সব মিলিয়ে খরচ পড়বে ৪ লাখ টাকার মতো। তবে বর্তমানে ফ্রান্সের যাওয়ার জন্য স্টুডেন্ট ভিসা খরচ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে কেননা ডলারের রেট আগের তুলনায় অনেক বেশি হয়ে গিয়েছে। 

যারা ফ্রান্সে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যেতে চান তাদের খরচ হতে পারে ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকার মতো। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে এই খরচের পরিমাণটা আরো বেশি হতে পারে। যদি কেউ এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা করে থাকেন তাহলে তার খরচ আসতে পারে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা। 

ফ্রান্স কাজের ভিসা যদি কোন দালালের মাধ্যমে করে থাকেন তাহলে খরচ আসবে ১৪ থেকে ১৬ লক্ষ টাকা। তবে দালালের হাত দিয়ে ফ্রান্স ওয়ার্ক পারমিট ভিসা করার অনেক ঝুঁকি রয়েছে তাই এক্ষেত্রে এজেন্সির মাধ্যমে করাটাই ভালো হবে।

ফ্রান্সে কোন কাজের চাহিদা বেশি?

ফ্রান্সে কোন কাজের চাহিদা বেশি ফ্রান্স কাজের ভিসা নিয়ে যাওয়ার আগে অবশ্যই এই বিষয়ে সঠিক ধারণা নিতে হবে। ফ্রান্সে পাইপ ফিটিং, ড্রাইভিং, রেস্টুরেন্ট, হোটেল ও কনস্ট্রাকশন এর কাজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। 

এইসব কাজের উপর যদি ভালো দক্ষতা সম্পন্ন হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই ফ্রান্সে গিয়ে সহজেই কাজ পেয়ে যাবেন। বিশেষ করে যারা ইংরেজি ভাষার উপর খুবই দক্ষ তারা ফ্রান্সে গিয়ে ভালো কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফ্রান্সে কাজের ভিসা নিয়ে গেলে অভিজ্ঞতা বাড়ার পাশাপাশি বেতনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

ফ্রান্সে কাজের বেতন কত?

ফ্রান্স যেহেতু ইউরোপের একটি দেশ তাই ফ্রান্সে কাজের ভেতরে স্বাভাবিকভাবে অনেক বেশি হয়ে থাকে। ফ্রান্সের যারা কন্সট্রাকশন ও রেস্টুরেন্টের কাজ করে থাকেন তারা মাসে এক লক্ষ থেকে দেড় লক্ষ টাকার মতো বেতন পেয়ে থাকেন। যারা হোটেলে কাজ করে থাকেন তারা টিপস সহ প্রতিমাসে ২ লক্ষ টাকার মত বেতন পেয়ে থাকেন।

তাছাড়া ফ্রান্সে যারা ড্রাইভিং কাজ করে থাকেন তারা মাসে দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা মতো বেতন পান। ফ্রান্সে সব থেকে বেশি বেতন পেয়ে থাকেন যারা আইটি খাতে কাজ করে থাকেন। আইটি খাতে যারা কাজ করে থাকেন তারা মাসে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকার মতো বেতন পেয়ে থাকেন।

বাংলাদেশ থেকে ফ্রান্স কত কিলোমিটার?

বাংলাদেশ থেকে ফ্রান্স কত কিলোমিটার বা বাংলাদেশ থেকে ফ্রান্সের দূরত্ব কত এই বিষয়ে অনেকের জানার আগ্রহ রয়েছে। যারা ফ্রান্স কাজের ভিসায় যেতে চান তারা এটাও জানতে চান বাংলাদেশ থেকে ফ্রান্সে যেতে কত সময় লাগে। বাংলাদেশ থেকে ফ্রান্সের দূরত্ব হচ্ছে ৭৯৯০ কিলোমিটার।

ফ্রান্সের টাকার মান কত | ফ্রান্সের ১ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা

ফ্রান্স বিশ্বের ষষ্ঠ অর্থনীতির দেশ। তাই ফ্রান্সের টাকার মান তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। বর্তমানে ফ্রান্সের এক টাকা সমান বাংলাদেশি ১১৭ টাকার কাছাকাছি। যেহেতু ফ্রান্সের টাকা ইউরো হিসেবে পরিচিত। ফ্রান্সের এক হাজার টাকা সমান এক লাখ ৯ হাজার ৭৫০ টাকা।

শেষ কথা, আশা করি আজকের পোস্টটি যারা মনোযোগ সহকারে পড়েছেন তারা ফ্রান্স যাওয়ার উপায় ও ফ্রান্স যেতে কত টাকা লাগে এই বিষয়ে মোটামুটি ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। 

তারপরেও এই নিয়ে যদি কোন ধরনের প্রশ্ন থাকে বা পোস্টটি পড়ে কোন বিষয়ে সম্পর্কে যদি বুঝতে অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url