কুয়েত ভিসা খরচ কত - কুয়েত কোন কাজের চাহিদা বেশি

কুয়েত বর্তমান বিশ্বের খুবই ধনি একটি দেশ। কুয়েতে সারা বিশ্ব থেকে প্রচুর সংখ্যক লোক কাজের উদ্দেশ্যে যায়। কুয়েতে বাইরে থেকে প্রায় দুই লক্ষ শ্রমিক কাজ করে থাকে। কুয়েতে এখন কয়েক ধরনের ভিসা পাওয়া যায়। কুয়েতে অনেকের যাওয়ার আগ্রহ থাকলেও কুয়েত ভিসা প্রসেসিংসহ যাবতীয় অনেক কাজ করতে গিয়ে অনেকেই ঝামেলার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। 
কুয়েত
কুয়েত
তাই আজকের আর্টিকেলে কুয়েত কাজের ভিসা পাওয়ার উপায়, কুয়েত কোন কাজের চাহিদা বেশি ও কুয়েত যেতে কত টাকা লাগে এই নিয়েই থাকছে মূল্যবান কিছু তথ্য।

কুয়েত কাজের ভিসা পাওয়ার উপায় | কুয়েত ওয়ার্ক পারমিট ভিসা

কুয়েত কাজের ভিসা যদি খুবই সহজভাবে পেতে হয় তাহলে বাংলাদেশ স্বীকৃত অনেক এজেন্সি রয়েছে এদের মাধ্যমে পেতে পারেন। এজেন্সির মাধ্যমে যদি ভিসা করতে সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে সরাসরি কুয়েতের এম্বাসি থেকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। 

তবে বাংলাদেশে বেশিরভাগ লোকই দালালের মাধ্যমে কুয়েত ওয়ার্ক পারমিট ভিসা করে থাকেন। কুয়েত কাজের ভিসা করার সবথেকে বিশ্বস্ত উপায় হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃত বায়োসেল অথবা অন্য কোন এজেন্সির মাধ্যমে করা। 

এই সকল এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা করলে যাবতীয় ডকুমেন্টস সহ যা যা করা লাগবে সমস্ত তথ্য আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ এজেন্সি ভিসা প্রসেসিং এর সকল দায়িত্ব নিয়ে নেবে। এখানে আপনাকে শুধুমাত্র এজেন্সিকে টাকা দিতে হবে। কুয়েতে যদি আপনার কোন আত্মীয় থেকে থাকে তাহলে তার মাধ্যমে ভিসা নিয়ে এম্বাসিতে জমা দিয়ে ভিসাটি প্রসেসিং করে নিতে পারেন।

কুয়েত কাজের ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সমূহ?

কুয়েত কাজের ভিসার জন্য অবশ্যই কিছু কাগজপত্র বা ডকুমেন্ট লাগবে। এজেন্সির মাধ্যমে করলেও এই ডকুমেন্টগুলো তাদেরকে দিতে হবে এবং আপনি যদি এম্বাসির মাধ্যমে করেন তাহলেও ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে। নিচে কুয়েত কাজের ভিসার জন্য কি কি ডকুমেন্ট লাগে তা উল্লেখ করা হলোঃ
  • ভিসা আবেদনকৃত ব্যক্তির সম্প্রতি তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে। তবে ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড অবশ্যই সাদা হতে হবে।
  • বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে এবং পাসপোর্টে অবশ্যই দুটি ফাঁকা পৃষ্ঠা থাকতে হবে।
  • পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ছয় মাসের বেশি থাকতে হবে।
  • ভিসার জন্য যে অ্যাপ্লিকেশন ফর্মটি পূরণ করতে হবে তাতে অবশ্যই সঠিক তথ্য দিতে হবে। 
  • যদি নিজের থেকে এপ্লিকেশন ফর্মটি পূরণ করা না যায় তাহলে কোন এজেন্সির মাধ্যমে করা যেতে পারে।
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট, মেডিকেল রিপোর্ট, এবং করোনা টিকা কার্ড প্রয়োজন হবে।
  • ভিসা আবেদনকৃত ব্যক্তির একটি সচল ব্যাংক একাউন্ট থাকা লাগবে।
কুয়েত কাজের ভিসা করতে হলে অবশ্যই এই কাগজপত্র গুলো জমা দিতে হবে। তাছাড়া আর কোন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগলে এজেন্সি বা এম্বাসির মাধ্যমে আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

কুয়েত কোন কাজের চাহিদা বেশি?

কুয়েতে যেসব বাঙালিরা কাজের ভিসা নিয়ে যায় তাদের কুয়েতের সব থেকে চাহিদা সম্পন্ন কাজের সন্ধান করে থাকেন। বর্তমানে কুয়েতে, ক্লিনার, কনস্ট্রাকশন, ও ড্রাইভিং কাজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া কুয়েতে অনেকে ভালো ভালো কোম্পানিতে কাজ করে থাকেন।

কুয়েতে অসংখ্য ফ্যাক্টরি রয়েছে যে সকল ফ্যাক্টরিগুলোতে ভালো বেতনে অনেক বাঙালি কাজ করেন।কুয়েতে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট এর কাজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই সকল কাজগুলোর উপরে যদি দক্ষতা থেকে থাকে তাহলে কুয়েতে গিয়ে কাজের অভাব হবে না।

কুয়েতে সর্বনিম্ন বেতন কত?

যে সকল কর্মীগণ কাজের ভিসা নিয়ে যেতে চান তাদের অনেকেই কুয়েতের সর্বনিম্ন বেতন কত এই বিষয়ে জানেন না। বর্তমানে কুয়েতে সর্বনিম্ন বেতন ৭০ দিনার। কুয়েতের সর্বনিম্ন বেতন কুয়েত সরকার দ্বারা নির্ধারিত করা হয়েছে। কুয়েতে একজন শ্রমিক কত ঘন্টা কাজ করবে তার উপর বেতনের পরিমাণ নির্ধারণ হয়ে থাকে। 

কুয়েতে কাজের অভিজ্ঞতা বাড়ার পাশাপাশি বেতনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। বিশেষ করে যারা কুয়েতে ওভার টাইম করে থাকেন তারা অনেক বেশি বেতন পেয়ে থাকেন।

কুয়েত কোম্পানি ভিসা বেতন কত?

কুয়েতে কোম্পানির ভিসায় কাজ করার অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। কুয়েতে কোম্পানি ভিসায় যারা কাজ করে থাকেন তাদের থাকা খাওয়া খরচ সহ যাবতীয় অনেক খরচ কোম্পানি বহন করে থাকেন। 

কুয়েতে কোম্পানির ভিসায় কর্মীদের বেতন ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রথম পর্যায়ে যারা কাজ করে থাকেন তারা সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা বেতন পেয়ে থাকেন। 

পরবর্তীতে কাজের অভিজ্ঞতা বাড়ার পাশাপাশি প্রতিবছর বেতনের পরিমাণ বৃদ্ধি হয়ে থাকে। তাছাড়া চিকিৎসা খরচ সহ সকল দায়িত্বই এক্ষেত্রে কোম্পানি বহন করবে তাই কোম্পানি ভিসায় কাজ করার অনেক সুবিধা রয়েছে।

কুয়েতে ক্লিনারের বেতন কত?

কুয়েতে যারা পরিছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজ করে থাকেন তারা অনেক টাকা বেতন পেয়ে থাকেন। কুয়েতে বর্তমানে যারা ক্লিনারের কাজ করে থাকেন তারা সর্বনিম্ন ৯০ দিনার বেতন পেয়ে থাকেন। যারা দীর্ঘদিন ধরে ক্লিনার কাজের সাথে যুক্ত তারা অনেকেই  সর্বোচ্চ ১৪০ দিনার পর্যন্ত বেতন পেতে পারেন।

তাছাড়া এখানে এই কাজের পাশাপাশি আরো অনেক ধরনের কাজ করা যায় যার কারণে আয়ের পরিমাণটা আরো অনেক বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

কুয়েত ড্রাইভিং ভিসা বেতন কত?

বর্তমানে কুয়েতে ড্রাইভিং ভিসার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কুয়েতে যারা ড্রাইভিং ভিসায় কর্মরত রয়েছে তাদের সর্বনিম্ন বেতন ১২০ দিনার। তাছাড়া পিকআপ সহ যারা অন্যান্য বড় গাড়ি চালিয়ে থাকেন তারা ১৪০ দিনার থেকে ১৬০ দিনার পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকেন। 

যারা প্রথম পর্যায়ে কুয়েতে ড্রাইভিং ভিসায় কাজ করবেন তারা সাধারণত এই বেতন পাবেন। তবে কুয়েতে ড্রাইভিং ভিসায় যদি দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত থাকেন অর্থাৎ পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে তাহলে প্রতিমাসে ২০০ দিনারের মতো বেতন পেতে পারেন। একটানা যারা ১০ বছর ড্রাইভিং ভিসায় কাজ করছেন তারা ৩০০ থেকে সাড়ে ৩৫০ দিনার বেতন পেয়ে থাকেন।

কুয়েত যেতে কত টাকা লাগে | কুয়েত ভিসা খরচ কত

কুয়েত ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যেতে কত টাকা খরচ হয়ে থাকে অনেক বাঙালিরা জানেন না। বাংলাদেশ থেকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা যদি কোন এজেন্সি বা দালালের মাধ্যমে করে থাকেন তাহলে ৬ থেকে ৭ লক্ষ টাকার মত খরচ আসতে পারে। 

কুয়েতের যদি আপনার কোন আত্মীয় স্বজন থেকে থাকে তার মাধ্যমে যদি ভিসা নিয়ে থাকেন তাহলে খরচের পরিমাণটা অনেক কম হবে। এক্ষেত্রে আপনারা চাইলে তিন লক্ষ টাকার মধ্যেই কুয়েতে চলে যেতে পারবেন। কিন্তু যারা দালালের মাধ্যমে যাবেন তাদের অবশ্যই সাত থেকে আট লক্ষ টাকা খরচ হবে।

কুয়েতের মুদ্রার নাম কি | কুয়েতের ১ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা

কুয়েতের মুদ্রা কে দিনার বলা হয়ে থাকে।বর্তমানে কুয়েতের এক দিনার সমান বাংলাদেশি ৩৫০.২৮ টাকার কাছাকাছি। কুয়েতের ১০০ দিনার সমান বাংলাদেশি ৩৫ হাজার ২২৮ টাকার মতো আসে।

বাংলাদেশ থেকে কুয়েত কত কিলোমিটার | বাংলাদেশ থেকে কুয়েত যেতে কত সময় লাগে

বাংলাদেশ থেকে কুয়েতের দূরত্ব হলো ৪২৮৬ কিলোমিটার। যদি এটাকে মাইলের হিসাবে ধরা হয় তাহলে ২৬৩৮ মাইল হবে। বাংলাদেশ থেকে যারা কুয়েতে ওয়ান স্টপ ফ্লাইটে ভ্রমণ করেন তাদের সময় লেগে থাকে ১২ ঘন্টা ২৫ মিনিটের মত। আর ননস্টপ ফ্লাইটে যেতে সময় লাগে ৬ ঘন্টা ৪০ মিনিটের মত।

আমাদের শেষ কথা, বাংলাদেশ থেকে কুয়েত যাওয়ার নিয়ম ও কুয়েত কাজের ভিসা কিভাবে পাওয়া যায় উপরোক্ত পোস্টটি পড়ে এই বিষয়ে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন। তাই কুয়েত যাওয়ার আগে অবশ্যই উপরের পোস্টে বর্ণিত বিষয়গুলো অবলম্বন করতে পারেন। তাহলে কুয়েতে কাজের ভিসা নিয়ে খুব সহজেই যেতে পারবেন ও সেখানে গিয়ে ভালো বেতন পাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url