কৃষি ব্যাংক লোন - কৃষি ব্যাংক লোন পদ্ধতি

বাংলাদেশে বসবাস করে যদি কৃষি লোন নিতে হয় তাহলে কৃষি ব্যাংক অসাধারণ হতে পারে। কৃষি ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন খাতে আঠারো মাস মেয়াদি লোন প্রদান করে চলেছে। কৃষি ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের লোন দেওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, ও আমাদের দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী ভাবে প্রকাশ করা। 
কৃষি ব্যাংক
কৃষি ব্যাংক
কৃষি ব্যাংক কিছু সহজ শর্তে গ্রাহকদের লোন প্রদান করে থাকে। আজকের পোস্টটিতে জানানো হবে কৃষি ব্যাংক লোন পাওয়ার নিয়ম বা কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার সুবিধা সম্পর্কে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাকঃ

কৃষি ব্যাংক কি সরকারি?

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক অবশ্যই শতভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি বিশেষায়িত ব্যাংক। এই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ১৯৭৩ সালের দিকে। ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল দেশের দরিদ্র ও গরিব কৃষকদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান ও তাদের জীবন মানের উন্নতি সাধন করার লক্ষ্য নিয়ে।

তাছাড়া সময়ের সাথে সাথে দরিদ্র বিমোচনে এই ব্যাংকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।‌ কৃষি ব্যাংক থেকে এখন অনেক দেশের অনেক দরিদ্র কৃষক সহজ শর্তে লোন নিয়ে থাকেন।

কৃষি ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার উপায়?

কৃষকদের আর্থিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে কৃষি ব্যাংক বিভিন্ন খাতে লোন প্রদান করছে। বাংলাদেশের কৃষকদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন প্রাপ্ত আর্থিক সেবা প্রধান কারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে কৃষি ব্যাংক দারুন সুবিধা দিচ্ছে। কৃষি ব্যাংক থেকে আপনারা চাইলে দুইভাবে লোন নিতে পারবেনঃ
  • bkb janala মোবাইল অ্যাপটি ডাউনলোড করার মাধ্যমে
  • নিকটস্থ কৃষি ব্যাংকের শাখায় গিয়ে লোন আবেদন ফরমের মাধ্যমে।
কৃষি ব্যাংক থেকে এই দুইটি পদ্ধতিতে খুব সহজেই লোন নিতে পারবেন। নিচে এই দুইটি পদ্ধতিতে কৃষি ব্যাংক থেকে কিভাবে লোন পাওয়া যায় সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করা হলোঃ

কৃষি ব্যাংক লোন পদ্ধতি?

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কৃষকদের সার্বিক ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য কৃষি ব্যাংক অসাধারণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। কৃষকদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের মোট ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫০টি জেলায় কৃষি ব্যাংকের সেবা চালু রয়েছে। 

যে সেবা গুলো ব্যবহার করে খুব সহজেই কৃষি ব্যাংক থেকে লোন পাওয়া যাচ্ছে। কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিতে হলে অবশ্যই আপনাদেরকে সর্বোচ্চ ১৮ মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। তাছাড়া কৃষি ব্যাংকের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন খাতে কৃষকদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদী পর্যন্ত লোন প্রদান করছে। 

যা গ্রাম বাংলার কৃষকদের জন্য খুবই অসাধারণ হতে পারে। নিচে কৃষি ব্যাংক থেকে লোন কিভাবে নিবেন ধাপে ধাপে সেটা দেখানো হলোঃ

bkb janala অ্যাপ ব্যবহার করে কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক লোন অ্যাপস

অনেকেই হয়তো ভাবছেন অ্যাপসের মাধ্যমে কিভাবে কৃষি ব্যাংক থেকে লোন পাওয়া যায় এটা কিভাবে সম্ভব? তাদের সুবিধার জন্য আগেই বলে রাখি যে bkb janala বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একটি অফিশিয়াল অ্যাপ। এই অ্যাপসটি ব্যবহার করে আপনারা কৃষি ব্যাংকের যাবতীয় অনেক তথ্যসহ লোন সুবিধা পেতে পারেন। 

প্রথমে আপনাদেরকে সরাসরি গুগল প্লে স্টোরে চলে যেতে হবে এবং সেখানে গিয়ে অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করে খুব সহজেই কৃষি ব্যাংকের সকল লোন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং কিভাবে লোন নিতে হয় তাও জেনে নিতে পারবেন।

কৃষি ব্যাংকের শাখায় গিয়ে লোন নেওয়ার নিয়ম?

কৃষি ব্যাংকের শাখায় সরাসরি গিয়ে খুব সহজেই লোন নেওয়া সম্ভব। কৃষি ব্যাংক থেকে শুধুমাত্র এই পদ্ধতিতে তারাই লোন নিতে পারবে যারা কৃষি ব্যাংকের গ্রাহক। প্রথমে আপনাদেরকে সরাসরি নিকটস্থ কৃষি ব্যাংকের শাখায় চলে যেতে হবে এবং সেখান থেকে লোন আবেদন ফরমটি সংগ্রহ করে পূরণ করতে হবে। 

লোন আবেদন ফরম পূরণ করার জন্য কিছু ডকুমেন্ট আপনাদেরকে সাথে করে নিয়ে যেতে হবে। ডকুমেন্টগুলো দেখে দেখে খুব সহজেই কৃষি ব্যাংকের লোন আবেদন ফরমটি পূরণ করতে পারবেন।

যদি নিজে লোন আবেদন ফরমটি পূরণ করতে না পারেন তাহলে কৃষি ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তাগণ রয়েছে যারা এই ধরনের ফর্ম পূরণ করে দেয় তাদের কাছে দিতে পারেন। তবে তাদেরকে ফরম পূরণ করার জন্য আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে হবে।

কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিতে কি কি ডকুমেন্ট লাগে?

কৃষি ব্যাংকের শাখায় গিয়ে যখন লোন আবেদন করবেন তখন অবশ্যই তাদের শর্তাদি অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিতে হলে সিকিউরিটির জন্য কিছু ডকুমেন্ট আপনাকে দিতে হবে। নিচে কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিতে হলে কি কি ডকুমেন্ট লাগে তা উল্লেখ করা হলোঃ
  • লোন‌ আবেদনকারী ব্যক্তির সদ্য ওঠা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ফটো লাগবে।
  • আবেদনকারীর ব্যক্তির জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি লাগবে।
  • নমীনির দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে।
  • নমিনির জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি লাগবে।
  • আবেদনকারী ব্যক্তির অবশ্যই কৃষি ব্যাংকের একটি একাউন্ট থাকতে হবে।
  • আবেদনকারী ব্যক্তির নাগরিক সনদপত্র লাগবে।
  • কতটুকু জমি রয়েছে তার প্রমাণের জন্য জমির দলিল লাগবে।
  • লেটার অফ হাইপোথিকেশন লাগবে।
  • সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ডিপি নোটি স্ট্যাম্প লাগবে।
  • জমিন দাতার প্রদত্ত গ্যারান্টিপত্র ও জমির খাজনার প্রমাণপত্র লাগবে।
  • শস্যবন্ধকি দলিল লাগবে।
  • লোন আবেদনকৃত ব্যক্তির পূর্ববর্তী ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রয়োজন হবে।
আরো কিছু ডকুমেন্ট এখন লাগতে পারে আপনারা সেগুলো সরাসরি কৃষি ব্যাংকের শাখা থেকে জেনে নিতে পারবেন খুব সহজেই।

কৃষি ব্যাংক লোন ইন্টারেস্ট রেট?

কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার পর কত শতাংশ সুদের হারে লোন পরিশোধ করতে হয় বা এর ইন্টারেস্ট রেট কত এই নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন রয়েছে। কৃষি ব্যাংকের লোন ইন্টারেস্ট রেট হলো শতকরা ৮%। অন্যান্য কিছু ব্যাংক রয়েছে যারা নয় শতাংশ হারে ইন্টারেস্ট গ্রহণ করে লোন প্রদান করে থাকে।

কৃষি ব্যাংক ও বাংলাদেশের অন্যান্য ব্যাংকের নেয় আগে নয় শতাংশ ইন্টারেস্ট নিতো কিন্তু এখন সেটা কমিয়ে ৮% নিচ্ছে। তবুও আপনারা কৃষি ব্যাংক থেকে যখন লোন নিবেন সেই লোনের ইন্টারেস্ট কত দিতে হবে সেটা সম্পর্কে লোন নেওয়ার পূর্বেই জেনে নিবেন না হলে পরবর্তীতে ভোগান্তির শিকার হতে পারেন।

কৃষি ব্যাংক থেকে কোন কোন খাতে লোন পাওয়া যায়?

কৃষি ব্যাংক থেকে বর্তমানে পাঁচটি খাতে খুবই সহজ শর্তে লোন নিতে পারেন। নিচে কৃষি ব্যাংকের যে পাঁচটি খাতে লোন পাওয়া যাবে তা উল্লেখ করা হলোঃ
  • মৎস ঋণ
  • শস্য ঋণ
  • কৃষি ও সেচ যন্ত্রপাতি ঋণ
  • লাইভ স্টক ঋণ
  • মুজিব বর্ষ ক্রেডিট স্কিম ঋণ
যারা কৃষি ব্যাংকের গ্রাহক আছেন তারা চাইলে কৃষি ব্যাংক থেকে এই পাঁচ ধরনের লোন খুব সহজেই কিছু সহজ শর্তাদি পালন করে নিয়ে নিতে পারবেন। তাছাড়া কৃষি ব্যাংকের আরো কিছু লোন সুবিধা রয়েছে সেই দুটি লোন পদ্ধতি সম্পর্কেও নিচে আলোচনা করা হলোঃ

কৃষি ব্যাংক পার্সোনাল লোন পদ্ধতি?

একজন কৃষক খুব সহজেই কৃষি ব্যাংক থেকে পার্সোনাল লোন নিতে পারবেন। কেননা আমাদের দেশের অর্থনীতির সাথে কৃষি ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে রয়েছে। যার কারনে আমাদের দেশের অর্থনীতিতে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।কৃষি খাতে যদি উন্নতি সাধন করা যায় তাহলে দেশ অনেক উন্নতি করবে। 

তাই এর পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি ব্যাংক বাংলাদেশের দরিদ্র ও গরিব কৃষকদের জন্য পার্সোনাল লোন সুবিধাটি চালু করেছে। এই লোন সুবিধাটি কৃষি ব্যাংক থেকে পেতে হলে অবশ্যই সেই ব্যক্তিকে কৃষি কাজের সাথে জড়িত থাকতে হবে। যে ব্যক্তি কৃষি ব্যাংক থেকে পার্সোনাল লোন নেবে সে যদি অতীতে কোন ধরনের লোন খেলাপীর সাথে যুক্ত থাকে তাহলে কোন ভাবেই সেই কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবে না।

কৃষি ব্যাংকের পার্সোনাল লোনের সুদের হার ১০% হারে নেওয়া হয়ে থাকে। কৃষি ব্যাংক থেকে পার্সোনাল লোন নিতে হলে আবেদনকারী ব্যক্তির জাতীয় পরিচয় পত্র ও কৃষি কার্ড প্রয়োজন হবে। তাছাড়া আবেদনকারী ব্যক্তি ও নমিনির পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি লাগে।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সিসি লোন পদ্ধতি?

কৃষি ব্যাংক থেকে যে সিসি লোনটি পাওয়া যায় সেটিকে বলা হয়ে থাকে ক্রাশ ক্রেডিট লোন। সিসি লোন নেওয়ার জন্য অবশ্যই বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে তার সম্পদ জমা রাখতে হবে। ব্যাংক থেকে সি সি লোন নিতে হলে আপনাকে লোনের দ্বিগুণ পরিমাণ সম্পদ ব্যাংকে জমা রাখতে হবে।

ধরুন আপনি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ টাকা লোন নিতে চান তাহলে এক্ষেত্রে আপনাকে কৃষি ব্যাংককে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার সম্পদ রাখতে হবে। কৃষি লোন নেওয়ার সময় অনেক গ্রাহক আছেন যারা জায়গা জমি ও স্বর্ণ ব্যাংকে জমা রেখে থাকেন।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে যে সিসি লোনটি পাবেন সিসি লোনের মেয়াদ হচ্ছে সর্বোচ্চ এক বছর। সিসি লোন নেওয়ার সবথেকে বড় সুবিধাটি হচ্ছে সিসি লোনের মাধ্যমে অনেক বেশি পরিমাণ অর্থ ব্যাংক থেকে নিতে পারবেন। কৃষি ব্যাংক থেকে যে সিসি লোনটি পাওয়া যায় তার সুদের হার নয় শতাংশ।

কৃষি ব্যাংক লোন আবেদন ফরম কোথায় পাবেন?

কৃষি ব্যাংক লোন আবেদন ফরম আপনারা সরাসরি কৃষি ব্যাংকের শাখায় গিয়ে নিয়ে নিতে পারবেন। আপনি যদি কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিতে চান তাহলে কৃষি ব্যাংকের শাখায় গিয়ে ব্রাঞ্চ অফিসারের কাছে গিয়ে কৃষি ব্যাংক লোন আবেদন ফরমটি নিয়ে নিতে পারবেন। তারপরে ফর্মটি সঠিকভাবে পূরণ করে সবকিছু ঠিকঠাক করে আবার জমা দিতে হবে।

শেষ কথা, আশা করি আজকের পোস্টটি যারা বিস্তারিত ও মনোযোগ সহকারে পড়েছেন তারা কৃষি ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় বা কৃষি ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার সুবিধা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। 

তারপরেও যদি এই বিষয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে বা পোস্টটি করে কোন বিষয় সম্পর্কে বুঝতে কোন ধরনের অসুবিধা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url