বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন

আসসালামু আলাইকুম আশা করি সকলেই ভালো আছেন। বুরো বাংলাদেশ হলো একটি জাতীয় বেসরকারি সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা যা ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানুষের দারিদ্র হ্রাস এবং আয় বৃদ্ধির জন্য দরিদ্র ও গ্রামীণ জনগণের জন্য কাজ করা। 
বুরো বাংলাদেশ
বুরো বাংলাদেশ
আজকের পোস্টে বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পাওয়ার উপায় ও সুযোগ সুবিধা এই বিষয়ে আলোচনা করা হবে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাকঃ

জাকির হোসেন,১৯৯০ সালে বুরো বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। বুরো বাংলাদেশ একটি প্রথম শ্রেণীর এনজিও প্রতিষ্ঠান। শুরুতে বুরো বাংলাদেশের শাখা অফিস ছিল ৫টি এবং শুরু থেকেই বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সামাজিক ও আর্থিক নানা সুবিধা দিয়ে আসছে।

১৯৯০ সালে এর জন্ম লগ্ন থেকেই বুরো এ দেশের দরিদ্র মানুষের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে চাহিদা মাফিক সামাজিক ও আর্থিক সেবা প্রদান করে চলে। বুরো বাংলাদেশ প্রত্যন্ত গ্রামঞ্চলের আনাচে-কানাচে প্রায় ১৩ লক্ষ গরীব-দুঃখী মানুষকে লোন সুবিধা দিয়ে আসছে যাদের মধ্যে ৮৮ শতাংশ নারী।

পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য এবং নারীর ক্ষমতায়ন ও সমঅধিকার নিশ্চিত করার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে এই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি। নিচে লোনের বিবরণ গুলো দেওয়া হলোঃ

বুরো বাংলাদেশ সাধারণ লোন?

গ্রামীণ ও শহরে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আত্ম-সামাজিক উন্নয়নে ও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে এ সাধারণ লোন দিয়ে থাকে বুরো বাংলাদেশ।সাধারণ লোন শুধুমাত্র অসহায়,দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের এ লোন দেয়া হয়। 

পরিবারের আর্থিক অবস্থান,লোন পরিশোধের ক্ষমতা ও চাহিদার উপর ভিত্তি করে বুরো বাংলাদেশ ৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত লোন দিয়ে থাকে। এ লোন ১-২ বছরের জন্য সপ্তাহিক ৪৫-৯০ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। আবার ১-৩ বছরের সময়সীমার জন্য ১২-৩৬ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে।

বুরো বাংলাদেশ কৃষি লোন?

এ লোনটি গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের জীবন-জীবিকা স্বচ্ছল করতে এবং খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে এ  লোন প্রদান করা হয়ে থাকে।উন্নত কৃষি কার্যক্রম ও খামারী তৈরির জন্য এ লোনের বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়া হয়।কৃষি লোন পরিবারের খাদ্য উৎপাদন বাড়ায়।দলভিত্তিক ও প্রান্তিক খামারিদের মাঝে এ লোন বিতরন করা হয়।

কৃষি লোনের পরিসীমা ১০,০০০ থেকে শুরু করে ২৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত দেয়া হয়.১-২ বছর মেয়াদি এই লোনের কিস্তি সাপ্তাহিক ৪৫-৯০ কিস্তিকে পরিশোধ যোগ্য এবং ১-৩ বছরের মধ্যে মাসিক ১২-৩৬ কিস্তিতে পরিশোধ করা লাগবে।

বুরো বাংলাদেশ হাত লোন?

এটি সাধারণত একক লোন।এ লোনটি একটি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টিনি হিসেবে পরিবেশনা করার উদ্দেশ্য এবং বুরো বাংলাদেশ দ্বারা পরিচালিত গ্রুপ ভিত্তিক আলোচনা,পরামর্শমূলত উদ্বেগ গ্রহণ ও গ্রাহকদের সন্তুষ্টি বজায় রেখে সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।হাত লোনটি  সমস্ত গ্রাহকদের তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলানো তাদের আর্থিক,শারীরিক ও সামাজিক সম্পদের ঘাটতি থেকে রক্ষা করা। 

যেমনঃ সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান ঈদ, পুজা, বড়দিন, বিয়ে ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজে সহযোগিতা করার জন্য এই হাত লোন প্রদান করা হয়ে থাকে।এই লোনের টাকার পরিমাণ খুব অল্প ৫০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা। লোন নেওয়ার পরে আপনাকে অবশ্যই ৫-৬ মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

বুরো বাংলাদেশ দুর্যোগ ঋণ?

দেশে বড় ধরণের ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যার মতো চরম জরুরী পরিস্থিতিতে এই লোন প্রদান করা হয়ে থাকে।বুরো বাংলাদেশ দুর্যোগ কবলিত মানুষের জন্য ত্রান বিতরণ করে থাকে। তবে এই সংস্থাটি বৃহৎ কোনো সহায়তা বা দীর্ঘমেয়াদী দাতব্য কার্যক্রমের পরিবর্তে,দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষের সচেতনতা ও গ্রামীণ স্বচ্ছলদের আত্ম-সহায়তার উপরে বিশেষ জোর দিয়ে থাকে। 

দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষের জন্য ১০০০ টাকা থেকে ২০,০০০ টাকা সহায়তা দিয়ে থাকে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো যাতে নিজের পায়ে দাড়াতে পারে।এই টাকা আপনাকে ১ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

বুরো বাংলাদেশ জল ও স্যানিটেশন লোন?

বেশিরভাগ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের অভাবে পরিবেশগত স্বাস্থ্য উদ্বেগ রয়েছে। গ্রামীণ সমাজে দরিদ্র এলাকার নিরাপদ পানির ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করে দিলে অসুস্থতা হ্রাস পাবে এবং এইভাবে শ্রম উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করবে। 

তাই নিরাপদ পানির জন্য নলকূপ স্থাপন ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার জন্য নিরাপদ স্যানিটেশন নির্মাণের জন্য লোন দিয়ে থাকে বুরো বাংলাদেশ। নলকূপ স্থাপন ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের লোনের পরিমাণ ৫,০০০ থেকে ২,০০,০০০ টাকা।এই লোন ১-২ বছরের মধ্যে সাপ্তাহিক  ৪৫-৯০ কিস্তিতে এবং ১-৩ বছরের মাসিক কিস্তিতে ১২-৩৬ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে।

বুরো বাংলাদেশ প্রবাসী লোন?

সাধারণত দরিদ্র মানুষদেরকে খুব সহজে কেউ লোন দিতে চায় না। লোন নিতে গেলে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। ব্যাংক সহজে লোন দেয় না বা লোন পেলেও নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই ব্যাংক থেকে যারা লোন নিতে চাচ্ছেন না তাদের জন্য আজকের এই পোস্ট।বুরো বাংলাদেশ থেকে খুব সহজে কোনো রকমের ঝামেলা ছাড়াই লোন নিতে পারবেন।

এইজন্য আপনার এনআইডি কার্ড ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে। আসলে এ লোন কোথায় থেকে নিবেন,কিভাবে নিবেন আমি বিস্তারিত আলোচনা করছি।হয়তো অনেকের মনে এই প্রশ্ন জাগে, আমিতো বিদেশে থাকি আমি কিভাবে লোন নেবো? হা আপনিও পাবেন বুরো বাংলাদেশ থেকে লোন নিতে। 

প্রবাসীরা এ লোন নিতে হলে যে দেশে থাকেন আপনার যে পারমিট কার্ড থাকে সেটার ফটোকপি ইমেইলে পাঠিয়ে দিবেন।বেশ আর কোনো ঝামেলা নেই। আপনার পরিবারের থেকে কেউ খুব সহজেই এই লোন তুলে দিতে পারবে।

বুরো বাংলাদেশ?

বর্তমানে সারাদেশে তাদের ৬৪ হাজার ৮৯৮টি সেন্টারের মাধ্যমে  ঋণ বিতরণ ও কিস্তির টাকা গ্রহণ করে।বিকাশের সাথে এই চুক্তির ফলে এখন প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি তাদের সদস্যদের বিকাশ একাউন্টে ঋণের টাকা বিতরণ করতে পারবেন। 

একইভাবে সদস্যরাও তাদের বিকাশ একাউন্ট থেকেই ঋণের কিস্তি চাইলে খুব সহজেই পরিশোধ করে ফেলতে পারবেন। বুরোর নানাবিধ আর্থ-সামাজিক পরিষেবার উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য ও অর্জনঃ
  • জামানত বা প্রসেসিং ফি ছাড়া ঋণ প্রদান
  • ঋণের সাথে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান
  • বিভিন্ন মেয়াদি সঞ্চয় সুবিধা ও চাহিবামাত্র উত্তোলন
  • সঞ্চয়ের লাভের উপর নেই কোন চার্জ
  • সকল শাখা থেকে ২.৫% প্রণোদনাসহ রেমিটেন্স গ্রহণ
  • বিকাশ/নগতের মাধ্যমে কিস্তি প্রদান
  • বিগত ৪ অর্থ বছর যাবত সেরা করদাতার স্বীকৃতি লাভ।
বুরো এর মিশন হল একটি স্বাধীন,টেকসই,সাশ্রয়ী ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান যা অত্যন্ত দরিদ্র,দরিদ্র এবং দুর্বল অ-দরিদ্র গ্রাহকদের অন্যান্য সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচীর সাথে প্রতিযোগিতামূলক মূলে বৈচিত্র্যময়, উপযুক্ত এবং বাজার প্রতিক্রিয়াশীল মানের আর্থিক ও ব্যবসায়িক উন্নয়ন পরিষেবা প্রদান করা।

বুরো এর চলমান প্রোগ্রাম?

  • ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচী।
  • কৃষি অর্থায়ন কর্মসূচী।
  • এসএমই ফাইনেন্সিং প্রোগ্রাম।
  • হার্ডকোর পুওর ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম।
  • মানব সম্পদ উন্নয়ন কর্মসূচী।
  • দুর্যোগ  ব্যবস্থাপনা কর্মসূচী।
  • পানি ও স্যানিটেশন প্রোগ্রাম।
  • রেমিটেন্স পরিষেবা।
বুরো বাংলাদেশ দুইটি প্রধান প্রোগ্রাম অফার করে,
  • একটি ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি এবং
  • একটি রেমিটেন্স প্রোগ্রাম।
ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচীর মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশে বসবাসকারী সুবিধাবঞ্চিত ও দরিদ্রদের মধ্যে দারিদ্র হ্রাস করা।রেমিটেন্স প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশী প্রবাসীদের বৈদেশিক আয়কে চ্যানেল করা এবং তাদের আয় তাদের স্বজনদের কাছে পাঠানো।

বুরো বাংলাদেশ লোনের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট নীতি অনুসরণ করে চলে। এই প্রতিষ্ঠান মহিলাদের বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়। আত্ম-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে মহিলাদের বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করে দেয়া হয়। বুরো বাংলাদেশ দারিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে বিশাল বড় অবদান রাখছে।

শেষ কথা, আশা করি আজকের পোস্টে যারা পড়েছেন তারা বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পাওয়ার উপায় ও সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন। তারপরেও যদি এই বিষয় সম্পর্কে কোন কিছু জানার থাকে তাহলে অবশই কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url