সহজে ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়

আমাদের অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংক লোন নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।ব্যবসায়িক অথবা ব্যক্তিগত কাজের জন্য অনেকে লোন নিয়ে থাকেন। কিন্তু ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার জন্য অনেক ধরনের শর্তাদি পালন করতে হয়।কেননা যে কোন ব্যক্তি ইচ্ছে করলেই ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারেন না।
ব্যাংক লোন
ব্যাংক লোন
অনেকে ব্যাংক লোন পাওয়ার সহজ উপায় সম্পর্কে জানতে চান।তাই আজকের পোস্টে ব্যাংক লোন পাওয়ার জটিল প্রক্রিয়া থেকে আমি আপনাদেরকে সহজ ভাবে বুঝাবো কিভাবে ব্যাংক লোনের জন্য আবেদন করতে হয়। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাকঃ

ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়?

ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় এই বিষয়ে জানার আগে সর্বপ্রথম ব্যাংক লোন কি এই বিষয়ে আমাদের ধারণা জেনে নিতে হবে। কেননা ব্যাংক লোন কি যদি এই সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা না থাকে তাহলে কখনো সহজ ভাবে বুঝতে পারবেন না।

ব্যাংক লোন কি?

অধিকাংশ ব্যাংক গ্রাহকদের সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনা করে একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য ঋণ দিতে প্রস্তুত হয়। আর এটাকেই সাধারণত ব্যাংক লোন বলা হয়ে থাকে। ব্যাংক লোনে গ্রাহকদের শর্ত ভেদে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সুদ দিতে হয়।

ব্যাংক লোন কত প্রকার?

ব্যাংক থেকে সাধারণত অনেক ভাবে গ্রাহকদের লোন দেওয়া হয়ে থাকে। গ্রাহকরা চাইলে নির্দিষ্ট শর্তাদি পালন করে এই সকল লোন সুবিধা গুলো ব্যাংক থেকে নিতে পারেন। অর্থাৎ গ্রাহক কি উদ্দেশ্যে বা কি কাজের জন্য লোন নিতে চান সেটা সর্বপ্রথম ঠিক করে নিতে হবে। নিচু কিছু ব্যাংক লোনের ধরন নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
  • পার্সোনাল লোন
  • বিজনেস লোন
  • হোম লোন
  • অটো লোন
  • প্রবাসী লোন ও কৃষি লোন
অর্থাৎ বাংলাদেশের বেশিরভাগ ব্যাংক গ্রাহকদের এই ধরনের লোন সুবিধা গুলো প্রদান করে থাকেন। গ্রাহকরা চাইলে স্বল্প মেয়াদে অথবা দীর্ঘ মেয়াদে এই লোনগুলো ব্যাংক থেকে নিতে পারেন।

স্বল্প মেয়াদী লোন কি?

ব্যাংক থেকে অনেকে স্বল্পমেয়াদি লোন নিয়ে থাকে। ব্যাংক থেকে স্বল্পমেয়াদি যে লোনগুলো ইস্যু করা হয়ে থাকে এর মেয়াদ হয়ে থাকে এক বছরের ভিতরে।বেশিরভাগ ব্যাংক কৃষি লোন প্রবাসী লোন এই লোন সুবিধা গুলো গ্রাহকদের এক বছর মেয়াদী দিয়ে থাকেন।

দীর্ঘমেয়াদী লোন কি?

স্বল্প মেয়াদী লোন গুলোর থেকে দীর্ঘমেয়াদি লোন গুলির সুদের পরিমাণ একটু বেশি।কিন্তু এই লোনগুলো অনেককে নিয়ে থাকেন কেননা এর মাধ্যমে গ্রাহক দীর্ঘমেয়াদী সময় পাই লোন পরিশোধ করার জন্য।দীর্ঘমেয়াদি লোন গুলো এক বছরের বেশি সময়ের জন্য দেওয়া হয়ে থাকে। 

দীর্ঘমেয়াদী লোন গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্সোনাল লোন, এডুকেশন লোন, হোম লোন, বিজনেস লোন। আশা করি এতক্ষণে দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি লোন কাকে বলে এই বিষয়ে সম্পর্কে মোটামুটি জেনে গিয়েছেন। 

এবার জানতে পারবেন লোন নেওয়ার বাংলাদেশের কোন ব্যাংক ভালো অর্থাৎ কোন ব্যাংকের মাধ্যমে সরাসরি লোন নিতে পারবেন ও ভালো সুযোগ সুবিধা পাবেন।

লোন পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের সেরা ব্যাংক কোনটি?

আপনারা অনেকেই জানেন বাংলাদেশের অনেক ব্যাংক রয়েছে যে ব্যাংকগুলো দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকদের লোন সুবিধা দিচ্ছে। তবে এদের মধ্যে থেকে বিশেষ কিছু ব্যাংক আমি সিলেক্ট করেছি যেখানে ভালো সুযোগ সুবিধা পাবেন। নিচে এরকম কয়েকটি ব্যাংকের তালিকা দেওয়া হলোঃ
  • Dutch bangla bank
  • Sonali bank
  • Janata bank
  • Gramen bank
  • Brac bank
  • Prime bank limited
  • City bank
  • Asian Bank
  • Al arafah bank
অর্থাৎ এই ব্যাংকগুলো থেকে লোন নেওয়া খুবই নিরাপদ এবং এখান থেকে অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। নিচে এই ব্যাংকগুলোর মধ্যে থেকে লোন নেওয়ার জন্য কোন ব্যাংক ভালো এই বিষয়ে কিছুটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হলো।

লোন নেওয়ার জন্য কোন ব্যাংক ভালো?

লোন নেওয়ার জন্য কোন ব্যাংক ভালো বা কোন ব্যাংক থেকে লোন নিবেন এই নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। অর্থাৎ কোন ব্যাংক থেকে লোন নিলে লোনটি দীর্ঘমেয়াদি হবে এবং লোনের সুদ কম নিবে এই নিয়ে জানাটা খুবই জরুরী। তাই এরকম কিছু ব্যাংকের তালিকায় আমি করেছি আপনাদের সুবিধার জন্য। নিচে এই বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছিঃ

সিটি ব্যাংক পার্সোনাল লোন

যারা পার্সোনাল লোন নিতে চান তাদের জন্য সিটি ব্যাংক অসাধারণ হতে পারে। সিটি ব্যাংক খুবই কম সুদে আপনাকে পার্সোনাল লোন প্রদান করবে।আপনি যদি ব্যাংক থেকে ৫ লক্ষ টাকা পাঁচ বছর মেয়াদী লোন নিয়ে থাকেন তাহলে এই ক্ষেত্রে ইন্টারেস্ট রেট প্রযোজ্য হবে ১০.৫ শতাংশ চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে। যারা ব্যবসায়ী রয়েছে তারা যদি সিটি ব্যাংক থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি এই লোনটি নিয়ে থাকেন তাহলে তাদের ইন্টারেস্ট চার্জ হবে ১৩ শতাংশ।

স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক পার্সোনাল লোন

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের পারপাস লোনকে আমরা অনেকেই পার্সোনাল লোন হিসাবে চিনে থাকি। এই ব্যাংক থেকে যারা এই লোন সুবিধা নিয়ে থাকেন তারা অনেক কম সুদে লোন পরিশোধ করতে পারেন। পাঁচ বছর মেয়াদী ৫ লক্ষ টাকা লোন নিলে এখানে আপনার ইন্টারেস্ট চার্জ কাটবে ৯.৯ শতাংশ। তাহলে অবশ্যই বুঝতে পারছেন এই ব্যাংক থেকে লোন নিলে সুদের পরিমাণ কত কম থাকছে।

ট্রাস্ট ব্যাংক স্যালারি লোন

বাংলাদেশের যত ব্যাংক রয়েছে তাদের মধ্যে যারা স্যালারি লোন দিয়ে থাকেন আমার কাছে সব থেকে সেরা মনে হয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংকের স্যালারি লোন সুবিধাটি। চাকরিজীবী ব্যক্তিরা চাইলে ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে এই স্যালারি লোনটি অনায়াসেই নিতে পারবেন। ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে যদি ৫ লক্ষ টাকা পাঁচ বছর মেয়াদী লোন হিসেবে নেওয়া যায় তাহলে এখানে ইন্টারেস্ট প্রদান করতে হবে ১১.৫ শতাংশ।

ইবিএল ব্যাংক থেকে লোন

ইবিএল ব্যাংক থেকে অনেকেই অল পারপাস লোন সুবিধাটি নিয়ে থাকেন। এই লোন শুধুমাত্র ইবিএল ব্যাংকের গ্রাহকরা নিতে পারবেন। ইবিএল ব্যাংক থেকে পাঁচ বছর মেয়াদী ৫ লাখ টাকার লোন দেওয়া হয়ে থাকে যেখান থেকে ইন্টারেস্ট চার্জ নেওয়া হয়ে থাকে ১০.৫%। 

তাছাড়া মাসিক ইনস্টলমেন্ট লাগে ১০,৭৪৬.৯৫ টাকার মতো। নিচে ব্যাংক লোন পাওয়ার জন্য যে সকল শর্তাদি পালন করা লাগে তার কিছু উদাহরণ দেওয়া হলঃ
  • কি জন্য আপনি লোন নিচ্ছেন
  • কিসের ব্যবসা করেন বা কোন ধরনের চাকরি করেন এবং কত বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে
  • লোন নিয়ে আপনি কোন কাজে ব্যবহার করবেন
  • আপনার ক্রেডিট হিস্ট্রি জানতে চাইবে
  • ব্যক্তিগত তথ্য ও ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট লাগবে
  • ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্ট লাগবে এবং আগে অন্য কোথাও থেকে লোন নিয়েছেন কিনা সেটা জানতে চাইবে
তাছাড়া এই শর্তাদি গুলো তাদের পালন করার পাশাপাশি আপনাদের আরও কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে যেগুলো না হলে কোন ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন না।

ব্যাংক লোন নেওয়ার জন্য কি কি ডকুমেন্ট লাগে/ব্যাংক লোন নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র?

ব্যাংক লোন নিতে হলে কর্তৃপক্ষকে আমাদের কিছু কাগজপত্র সাবমিট করতে হবে। অর্থাৎ এগুলো তাদের কাছে সিকিউরিটি বাবদ জমা থাকবে। নিচে ব্যাংক লোন নেওয়ার জন্য যে ধরনের ডকুমেন্ট বা কাগজপত্র লাগে তা উল্লেখ করা হলোঃ
  • আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হবে এবং সেটি যথাযথভাবে পূরণ করে স্বাক্ষর সহ জমা দিতে হবে।
  • আপনার ফটোগ্রাফ দিতে হবে।
  • জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি প্রয়োজন হবে।
  • অফিস আইডি কপি সহ সেলার সার্টিফিকেট লাগবে।
  • যেকোনো বিলের কপি সহ ইনকাম ট্যাক্সের রিটার্ন অনুলিপি লাগবে।
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ফটোকপি অথবা পাসপোর্টের ফটোকপি লাগবে।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট লাগবে।
সাধারণত বাংলাদেশের বেশিরভাগ ব্যাংকগুলোতে লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে এই ডকুমেন্টগুলো প্রয়োজন হয়ে থাকে।তবে বাড়তি কিছু ডকুমেন্ট লাগলে আপনাদেরকে ব্যাংক থেকে জানিয়ে দেয়া হবে সেই অনুযায়ী ডকুমেন্ট সাবমিট করলেই কাজ হয়ে যাবে।

ব্যাংক লোন নেওয়ার সুবিধা ও অসুবিধা?

ব্যাংক লোন নেওয়ার কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে অনেককে এই ধরনের সুবিধা অসুবিধাগুলো জেনে ব্যাংক লোন নিতে হবে।

ব্যাংক লোন নেওয়ার সুবিধা?

আপনি যদি কোন ব্যাংকের গ্রাহক হয়ে থাকেন তাহলে হুট করে টাকার প্রয়োজন হলে ব্যাংক থেকে ইমারজেন্সি লোন নিতে পারবেন।এই ক্ষেত্রে আপনাকে সহজেই কিছু রিকোয়ারমেন্ট পূরণ করে ব্যাংক লোন নিয়ে নিতে পারবেন। পরবর্তীতে আপনারা চাইলে ধীরে ধীরে কিছু বাড়তি টাকা সুূূূদ দিয়ে ব্যাংক লোন পরিশোধ করতে পারেন।

ব্যাংক লোন নেওয়ার অসুবিধা?

ব্যাংক লোন নেওয়ার যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি কিছু অসুবিধা রয়েছে। এমন অনেককেই দেখা গিয়েছে যারা ব্যাংক লোন নিয়ে কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। তাই এক্ষেত্রে অবশ্যই যে ব্যাংকগুলো অনেক বেশি সুদ দিয়ে থাকে তাদের থেকে দূরে থাকতে হবে। কম সুদে যারা লোন দিয়ে থাকে তাদের কাছ থেকে লোন নিতে হবে।

ব্যাংক লোন নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা?

যেকোনো ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার আগে আমাদেরকে সর্বপ্রথম কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। এই বিষয়গুলো সম্পর্কে যদি জানা না থাকে তাহলে পরবর্তীতে অনেকেই সমস্যায় পড়তে পারেন। নিচে এরকমই গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরা হলঃ

ক্রেডিট স্কোর জেনে নিতে হবে

লোন নেওয়ার আগে অবশ্যই নিজের ক্রেডিট স্কোর দেখে নিবেন তাহলে আপনার ক্রেডিট স্কুলের উপর বেশি পরিমাণে লোন নিতে পারবেন এবং টাকাটা ভালো কাজে লাগাতে পারবেন।

ইন্টারেস্ট রেট কত নিবে

ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার আগে সর্বপ্রথম লোনের জন্য কত টাকা ইন্টারেস্ট চার্জ করবে বা কত টাকা সুদ নিচ্ছে সেটা সম্পর্কে আগে জেনে নিতে হবে। যদি অতিরিক্ত হারে সুদ নিয়ে থাকে তাহলে লোন নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে কেননা পরবর্তীতে লোন পরিশোধ করতে গ্রাহকের সমস্যা হতে পারে।

প্রসেসিং চার্জ জেনে নিতে হবে

ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার আগে প্রসেসিং চার্জ কত নিচ্ছে বা প্রসেসিং খরচ কত পড়বে এই বিষয়ে জেনে নিতে হবে। তাহলে বাড়তি খরচের সম্ভাবনা থাকে না।

ফ্রি পেমেন্ট চার্জ

কোন ব্যাংক থেকে লোন নিতে হলে অবশ্যই ফ্রী পেমেন্ট চার্জ সম্পর্কে ব্যাংক থেকে জেনে নিতে হবে।
এই বিষয়গুলো প্রত্যক ব্যক্তির অবশ্যই ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার আগে অবলম্বন করতে হবে। তাহলে কোন ধরনের ভোগান্তির শিকার হতে হবে না। 

শেষ কথা, ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় বা কিভাবে খুব সহজেই ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন আজকের পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে এই বিষয়ে আর বুঝতে বাকি নেই।তারপরেও যদি এই বিষয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে বা কোন বিষয় সম্পর্কে বুঝতে অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বর্তমান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url